পোস্টটি পড়া হয়েছে 19,192 বার

সিএসই – প্রোগ্রামিংঃ প্যাশন – অর্থোপার্জন

Post updated on 24th April, 2017 at 10:34 pm

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের সাথে জড়িত বড় ভাইয়ারা একটা কথা প্রায়ই বলে থাকেন “প্রোগ্রামিং শিখে অনেক টাকা কামাবো এই চিন্তা করে প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করলে খুব বেশি টাকা আসলেই কামাতে পারবেন না। প্রোগ্রামিং শিখতে হবে প্যাশনের জায়গা থেকে”।

এই কথাটার মানে আসলে কি? প্রোগ্রামিং শিখলেই তো হয়। টাকা কামানোর জন্য শিখি বা অন্য যে কোনো কারণে শিখি এটা শিখে জব পাব না? weird না কথাটা? উপরের কথাটা আমি যেভাবে বুঝি সেটাই তুলে ধরছি।

আমার মতেঃ

প্রোগ্রামিং একটা ধৈর্য্যের কাজ। যেমন ধৈর্য্যের কাজ প্রফেশনাল যে কোনো খেলাধুলা। পর্বত জয় করা। সাইকেল চালিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া। ধরেন আপনি সাইকেল চালিয়ে খুব একটা জুত পান না। যদি বলি ৫ দিনে আপনাকে ৫০০ কিলো চালাতে হবে। তাহলে এত টাকা পাবেন। আপনি কি পারবেন? কখনোই পারবেন না। কিন্তু আমি হয়ত চেষ্টা নিয়ে দেখতে পারি। কারণ সাইক্লিং আমার কাছে একটা প্যাশন। এক দিনে সর্বোচ্চ চালিয়েছিলাম ১২১ কিলো, তখন রীতিমত আনাড়ি ছিলাম সাইক্লিং এ। প্যাশন না থাকলে সম্ভব ছিল না।

একই রকম ভাবে আপনি প্রোগ্রামিং এর মত brainstorming একটা কাজকে যদি “আনন্দ লাভের মাধ্যম” হিসাবে চিন্তা করতে না পারেন তাহলে পেইনটা সহ্য করতে পারবেন না। আপনার মধ্যে হা-হুতাশ কাজ করবে যে “কবে কোনটা শিখব আর কবে টাকা কামাবো”। এক সময় নিজের অজান্তে শর্টকাটে টাকা কামানোর জায়গায় চলে যেতে থাকবেন।
অন্য দিকে আপনি যদি প্রোগ্রামিং করে মজা পান। তাহলে ঘন্টার পর ঘন্টা একটা প্রবলেম নিয়ে পড়ে থাকলেও খারাপ লাগবে না। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে, আম্মু ডাকছে… কিন্তু দেখবেন ওঠা হচ্ছে না। হিসুর চাপের মাত্রা ‘দশ নম্বর বিপদ সংকেত’ অতিক্রম করার আগ পর্যন্ত দেখবেন ওঠা হচ্ছে না। এগুলো শুধুমাত্র আপনার প্যাশন আর এই কাজের প্রতি ভালবাসা থাকলেই সম্ভব।

তো প্যাশন থাকলে না হয় প্রোগ্রামিং শিখলেন। তাহলে কি প্যাশনেট প্রোগ্রামাররা ‘হাওয়াজীবি’ প্রাণী? হাওয়া খেয়ে জীবন ধারণ করেন? জ্বি না… তারা যথেষ্টই ইনকাম করেন আর ইনকামটাকে মনে করেন তাদের প্যাশনের “বাই প্রোডাক্ট” বা উপজাত। ঐ যে ছোট বেলায় কেমিস্ট্রিতে পড়েছিলাম না? অমুকের সাথে তমুকের বিক্রিয়ায় আগডুম উৎপন্ন হয়। আগডুমের পাশাপাশি উপজাত হিসেবে উৎপন্ন হয় বাগডুম। প্রোগ্রামারদের কাছে তার শেখা নলেজ আর ডেভেলপ করা প্রোডাক্টটা হয় আগডুম। টাকা পয়সা হয় বাগডুম! অর্থাৎ আনন্দের একটা কাজ করতে করতে বা খেললে খেলতে টাকা কামানো। সাকিব আল হাসান যেভাবে কামায় আর কি…

আপনি যদি কোনো ভাবে টের পান যে, প্রোগ্রামিং জিনিসটা আপনাকে ঠিক টানছে না। তাহলে জোড়-জবরদস্তি করে ভালবাসা আদায় করার চেষ্টা করবেন না। জানেনই তো, জোর করে ভালবাসা হয় না। সবাইকে প্রোগ্রামিং করতেই হবে এমন না। আপনার হয়ত রোবোটিক্স ভাল লাগবে। সরাসরি কলকব্জা নিয়ে কাজ করে হয়ত আনন্দ পাবেন। অথবা হতে পারে সার্কিট ডিজাইন করতে আপনি ভালবাসেন। বা জটিল জটিল ডেটাবেজ ডিজাইন করে ইফিসিয়েন্টলি তাতে ডেটা রাখা ও বের করার কাজ হয়ত আপনি ভাল পারেন। আপনি হয়ত আগামীর হট টপিক বিগ ডেটা বা বিজনেস ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করতে মজা পাবেন। প্রোগ্রামিং এ আগ্রহ না পেলে ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড কম্পিউটার সায়েন্সের অন্যান্য শাখাগুলোতে এক্সপ্লোর করা যেতে পারে। যেটাতে কাজ করে আনন্দ পেলেন সেটায় লেগে থাকলেন।

প্রমথ চৌধুরীর “সাহিত্যে খেলা” নামের একটা প্রবন্ধ আছে। সুযোগ পেলে পড়ে দেখতে পারেন। তাঁর মতে সাহিত্য হচ্ছে সাহিত্যিকদের আনন্দ লাভের মাধ্যম। এর মাধ্যমে সাহিত্যিক নিজে আনন্দ লাভ করেন। সাহিত্য যখন সাহিত্যিকের আনন্দ লাভের জায়গা থেকে সরে যায় তখন তা হয়ে পড়ে নিজ ধর্মচ্যুত। তখন সেটার আর সাহিত্য মূল্য থাকে না। একই রকম ভাবে বলা যেতে পারে যে, প্রোগ্রামিং শেখার শুরুতে যদি আপনার উদ্দেশ্যই থাকে “ভার্সিটিতে সিএসইতে ভর্তি হয়েছি। ৬ মাস পর থেকে ফ্রিল্যান্সিং করে পকেট খরচ বা ভার্সিটির খরচ চালাবো” তাহলে খুব বেশি সম্ভাবনা আছে যেই সাবজেক্টে আপনি পড়ছেন সেটার উদ্দেশ্য ব্যহত হবে। ৬ মাস ১ বছরে ইনকাম নিশ্চিত করতে চাইলে আপনাকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট/ডিজাইন বা কোনো রকম অ্যাপ ডেভেলপ করে ইনকামের চেষ্টা নিতে হতে পারে। এরপর কিছু ক্লায়েন্ট পাবেন। এদের পিছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে দেখবেন ভার্সিটির পড়ালেখার অবস্থা খারাপ। সব সাবজেক্টই “কোনো মতে” পাশ করার চেষ্টা চালাবেন। ভার্সিটি শেষ করে আপনি হয়ত সফল ওয়েব ডেভেলপার হবেন। কিন্তু আপনার মধ্যে হয়ত একজন রিসার্চার ছিল, তার মৃত্যু হল। আপনি হয়ত কোড করার চেয়ে আরো অনেক ভাল কিছু আরো চ্যালেঞ্জিং কিছুর সুযোগ হাতছাড়া করবেন। আপনি হয়ত টের পাবেন যে, কম্পিউটার সায়েন্সের জটিল বিষয়গুলো আপনি বেশ ভাল বুঝাতে পারেন। টিচার হিসাবে আপনার ভাল করার সুযোগ আছে। কিন্তু ক্লায়েন্টের হেঁসেল ঠেলতে ঠেলতে হয়ত দেখা গেল রেজাল্টের অবস্থা নাস্তানাবুদ। আপনার সব যোগ্যতা থাকার পরেও রেজাল্টের জন্য আটকে গেলেন। স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে পড়তে যাবার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সাধারণত ক্লায়েন্টের কাজের জন্য যা কিছু শেখা দরকার হয় সেগুলো কিন্তু CSE পড়া ছাড়াই করতে পারি। তাহলে কষ্ট করে এই ডিগ্রি নেয়ার দরকার কী? এসব আর না বলি। তর্ক-বিতর্ক শুরু হবার চান্স আছে।

বুঝাতে চাচ্ছি ভার্সিটির সাবজেক্টগুলো বুঝে বুঝে পড়েন। প্রোগ্রামিং এ প্যাশন থাকলে এটা নিয়ে নানা ধরণের এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে যান। নতুন নতুন জিনিস শিখুন। নতুন নতুন জিনিস বানান। খরচ চালাতে টিউশনি করুন। ডেটা+অ্যালগো ভাল পারলে আসেপাশে খেয়াল রাখুন। ভার্সিটি থেকে হতাশ হয়ে অনেকেই কিন্তু এখন এগুলো পারসোনাল্যি শিখতে চায়। এগুলোর টিউশনি করতে পারেন। নিজেরও শেখা হবে, আনন্দ পাবেন টাকার পরিমানও খারাপ না।

সময় নষ্ট করবেন না। সপ্তাহ শেষে নিজেকে নিয়ে বসুন। এক সপ্তাহে আপনি প্রোডাক্টিভ কী কী করেছেন ভাবুন। কয় ঘন্টা পড়াশোনা করা উচিত ছিল? সেটা করেছেন কিনা। ভার্সিটির সিলেবাসের বাইরের কোন টপিকগুলো আপনি কভার করেছেন এগুলো নিয়ে চিন্তা করেন। যদি দেখেন প্রাপ্তির খাতায় আছে শুধু “ভার্সিটিতে গেছি, আইছি…” তাহলে কী করতে হবে নিজেই বুঝবেন। ভাল কথা, ফেসবুকে কয় ঘন্টা থাকলেন। সুযোগ হলে ব্রাউজারে কোনো একটা এক্সটেনশন এড করে এটা ট্র্যাক কইরেন। আশা করি নিজের পথ নিজেই বের করে নিতে পারবেন।

ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছেন। অনেক দিন পার হয়ে গেছে। হতাশা আর হতাশা… কী করবেন জানতে চান? যদি প্রোগ্রামিং ভাল্লাগে তাহলে যে কোনো একটা বই নিয়ে বসে পড়েন। টানা সাত দিন ঐ বইয়ের জগতে হাঁটাহাঁটি করেন। ফেসবুকে, আড্ডায় সময় কম দেন। সাত দিন পর নিজের একটু না একটু প্রোগ্রেস হবেই।

এমন অনেককে চিনি। যারা এক বছর আগে আমাকে বলেছিল “ভাই কিছুই পারি না। হতাশ হয়ে গেছি। কোথা থেকে শুরু করব বুঝতেছি না।” তারা এক বছর পর এখনো দেখা হলে একই কথাই বলে।

ব্যাপারটা দুঃখজনক। এক বছর আগে যদি তারা সি নিয়ে বসত। ১ মাসে সি শিখে পরের ৩ মাস জাভা শিখে হয়ত ছোটখাট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ বানাতে পারত। ভার্সিটি শেষ করে অন্তত এন্ট্রি লেভেল অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপার হিসাবে অ্যাপ্লাই করতে পারত। কিন্তু এখন কিসে অ্যাপ্লাই করবে নিজেই বুঝতেছে না। এমনটা যেন না হয়।

হাজারটা ফিল্ড আছে কাজ করার মত। কাজ দেয়ার জন্য মানুষ জন বসে আছে। আমরা কি সেই কাজগুলো করার যোগ্য?

20 thoughts on “সিএসই – প্রোগ্রামিংঃ প্যাশন – অর্থোপার্জন

  1. ভাল লিখছেন ভাই। খুব অনুপ্রানিত হইলাম।

  2. ভাই Non-CSE ছাত্র যারা তাদের জন্য কিছু লেখন। যেমন আমি সেই Class 12 থেকে programming এর প্রতি ভালবাসা। programming করি। কিন্তু আমি CSE তে পড়ার সুযোগ পায়নি। আমি Khulna University এর Life Science এর Student. কিন্তু এখনো ভালবাসাটা ছড়তে পারি নাই। এখন আমি Android App Developement নিয়ে আছি। প্রতিদিনই কিছু না কিছু শিখেই চলেছি। আর আনুশীলন তো চেলেই। আমার মত অনেক আছে। Non-CSE দের জন্য গাইড় লাইন বিষয়ক একটা অনুরোধ। দয়া করে বিষয়টা একটু মাথায় রাখবেন ভাই।

    1. আমি Khulna University CSE’13, বঙ্গবন্ধু হলের ২০১ এ আছি, আমার সাথে দেখা করতে পারেন…

  3. onak onupranito holam vaia, vaia ami dhaka university ta CSE study kortaci. apnar writer amar onak valo laga,,,,,

  4. ইচ্ছে আছে
    কিন্তু এসব নিয়েই কারো সাথে সময় কাটাতে চাই
    প্রোগ্রামিং এ আগ্রহ আছে, রোবটিক্স এ আরো বেশি ছিল
    কিন্তু পার্টস এ প্রচুর খরচ আছে বলে সেই ইচ্ছা বাদ দিয়ে দিয়েছি

    প্রোগ্রামিং নিয়ে পড়ে থাকতে চাই
    কিন্তু আমি চাই,আমার সাথে সময়+ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য কিছু বন্ধু থাকুক
    যাদের সাথে প্রোগ্রামিং নিয়েই আড্ডা দেবো

    1. আপনি যদি সত্যি সত্যিই এরকম বন্ধু খুঁজেন তাহলে সঠিক ভাবে সময় কাজে লাগাতে হবে। যেই প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে আগ্রহী সেটাতে লেগে থেকে দিনের পর দিন খেটে যেতে হবে আর এই রিলেটেড কম্যুনিটিতে কন্টিব্রিউট করতে হবে। আপনি প্রথমত সাহায্য চেয়ে পোস্ট করবেন। এক সময় অন্যকে সাহায্য করবেন। এই সময়টাতেই আপনার মতের সাথে মিলে এমন কয়েকজনকে পেয়ে যাবেন। ইন্টেনশনাল্যি গ্রুপ করে শুরু করলে দেখেছি খুব একটা লাভ হয় না। আপনি যদি প্রোগ্রামিংয়ের জগতের ভিতর বসবাস করেন, দেখবেন এই জগতে আপনার মত অনেকেই আছেন। আমার জানা মতে এটাই একমাত্র ইন্ডাস্ট্রি যেখানে মানুষ অসম্ভব রকমের হেল্পফুল আর কমুনিটির জন্য নি:স্বার্থ ভাবে কাজ করে।

      শুভ কামনা রইলো।

  5. vai..freelancing korte ki programming jana lage..?
    ar apni sesh er dike bollen jdi programming vallage taile 1ta boi niye boste porte…oi boi er jogote 7 din hatahati krte..bt 1ta prblm jokhn mile na…matha ar tokhn kaj kre nah..chinta krte pari na tokhn..

    ar vai amar aro kisu prblm ase..inbox e bolle btr hoito..apnak add dslam+msg o dslam..jdi dkhten vai….taile help hoito..

    id link: facebook.com/no.profit.121

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *