Post updated on 24th September, 2024 at 06:46 am
গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখ MEC – Muslim Entrepreneurs Community কর্তৃক আয়োজিত “Career in IT – সম্ভাবনা ও বাস্তবতা” শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে শ্রদ্ধেয় শিবলী মেহেদী ভাইয়া Etiquettes of Workplace শিরোনামের একটি সেশন নিয়েছিলেন। তাঁর সেশনের মূল পয়েন্টগুলোর উপর ভিত্তি করে নিজের মত করে এই ব্লগপোস্টটি লিখছি। আশা করি এর মাধ্যমে আমাদের ওয়ার্কস্পেসকে আরো সুন্দর করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
একজন মুসলিমের পেশাগত জীবনের শিষ্টাচার
- অফিসের ডেস্ক ক্লিন রাখা
- অফিস টাইম মেইনটেইন করা
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মেইনটেইন করা
- মুখের দুর্গন্ধ থেকে অবশ্যই মুক্ত থাকা
- জুতা ও মোজার দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত থাকা
- ওয়াশরুম ক্লিন রাখা (প্লিজ প্লিজ প্লিজ…) এই ভিডিওটি দেখুন
- কলিগদের স্যালারির খোঁজ না নেয়া
- সময় মত নামাজ পড়া
- কলিগ ও কোম্পানির জন্য দুআ করা
- সওয়াবের নিয়তে পরিবারের জন্য অর্থ ব্যয় করা
- জুনিয়রদেরকে ডেস্কে ডেকে আনার চেয়ে সম্ভব হলে তাদের ডেস্কে যাওয়া
- রাগের মাথায় বস বা কলিগদেরকে রিপ্লাই না দেয়া। সময় নেয়া
- জব সুইচ করার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রসিডিউর মেইনটেইন করা
নিচে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর কয়েকটি সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হলো।
অফিসের ডেস্ক ক্লিন রাখা
অফিসের ডেস্কের কাগজপত্র, খাতা-কলম ইত্যাদি গুছিয়ে রাখা। নিয়মিত মনিটর, কীবোর্ড ইত্যাদি পরিষ্কার করা। অনেকের মনিটরে পুরু ধুলার আস্তর পড়ে থাকে। মাউস-কীবোর্ড আঠা আঠা হয়ে থাকে। ডেস্কের উপর পাওয়ার ক্যাবল, মনিটরের ক্যাবল, মাউস-কীবোর্ডের ক্যাবল ইত্যাদি অগোছানো ভাবে ফেলে না রাখা। একটু গুছিয়ে রাখলে কাজের পরিবেশটা সুন্দর হয়। অনেকের চা-কফির মগ দিনের পর দিন দেখা যায় পড়ে থাকে। এগুলোর বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
অফিস টাইম মেইনটেইন করা
সময় মত অফিসে যাওয়া এবং সময় মত বাসায় ফেরা। অফিস টাইমে পারসোনাল কাজ না করা। অফিসের সাথে যদি এরকম চুক্তিতে আবদ্ধ হই যে, চাকুরিরত অবস্থায় ছুটির দিনেও অন্য কোনো কোম্পানিতে ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে না। তাহলে সেই চুক্তি ভঙ্গ না করা। অনেক সময়েই দেখা যায় এমপ্লয়িরা অফিসের কাজের চেয়ে পারসোনাল ফ্রিল্যান্সিং ক্লায়েন্টের কাজকে বেশি প্রায়োরিটি দেয়। অফিসের সময়েও ক্লায়েন্টের কাজ করে। অফিস টাইমে পারসোনাল কাজ করে, ফেসবুকিং করে সময় নষ্ট করে উপার্জনের মাঝে হারাম পয়সা মিশ্রিত না করি।
লাউড স্পিকারে মিটিং করে অন্যের মনোযোগ নষ্ট না করা। প্রয়োজনে হেডফোন ইউজ করা। লম্বা ফোন কল হলে মিটিং রুম বা আশেপাশে সরে যাওয়া উচিত। আপনার গল্প বা আড্ডায় অন্যের কাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। অন্যের হক্বের বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মেইনটেইন করা
নিয়মিত নখ কেটে পরিচ্ছন্ন রাখা। নখের নিচের ময়লা কলিগদের চোখে পড়লে ব্যক্তিত্বের সংকট তৈরি হতে পারে। পরিষ্কার জামা কাপড় পরা। নিয়মিত গোসল করা। যেন শরীরের ঘামের দুর্গন্ধে পাশের জনের কষ্ট না হয়। সম্ভব হলে অফিসে গিয়ে ঘামযুক্ত জামা পরিবর্তন করা।
মুখের দুর্গন্ধ থেকে অবশ্যই মুক্ত থাকা
নিয়মিত দাঁত মাজা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে অন্তত পাঁচ বার মিসওয়াক করা। যেন কোনো কলিগ আমার মুখের গন্ধে কষ্ট না পান। মুখে দুর্গন্ধ হলে টিমমেটদের সাথে কথা বললে তারা মেসেজগুলো ভালো ভাবে বুঝতে পারেন না। দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার আশায় পরিমরি করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় থাকে। অনেক সময় দেখা যায় লাঞ্চের পর কেউ এসে আপনার মুখোমুখি বসে কথা বলা শুরু করলো। আর তার মুখ থেকে খাবারের গন্ধ আসছে। এটা খুব বিব্রতকর। খাওয়াদাওয়ার পর গড়গড়া করে কুলি করা উচিত। প্রয়োজনে মিসওয়াক করা উচিত। যেন খাদ্যকণাগুলো মুখে পচে দুর্গন্ধ হওয়ার সুযোগ না পায়। মুখের দুর্গন্ধের কারণে ফেরেশতারা কষ্ট পান।
জুতা মোজার দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত থাকা
জুতা-মোজায় গন্ধ হয় এমন পরিস্থিতি এভয়েড করা। প্রয়োজনে নিয়মিত জুতা-মোজা পরিষ্কার করা। অনলাইনে সার্চ করলে মোজার গন্ধ এভয়েড করার অনেক টিপস পাওয়া যায়। সেগুলো ফলো করা যেতে পারে। এই বিশ্রি গন্ধের কারণে অফিসের সকলেরই কষ্ট হয়। যদি আপনি টিমের মধ্যে সিনিয়র হন তাহলে হয়ত কেউ আপনাকে সরাসরি বলবে না। কিন্তু আড়ালে আপনাকে সবাই অপছন্দ করবে। আপনার ব্যক্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
ওয়াশ রুম ক্লিন রাখা (প্লিজ প্লিজ প্লিজ…)
আমরা প্রত্যেকেই হাই কমোডের রিং ভেজা থাকাকে অপছন্দ করি। কিন্তু নিজে ওয়াশ রুমের কাজ সেরে বেরিয়ে আসার সময় কি কমোডের রিংটা ক্লিন করে আসি? আমার ঠিক বুঝে আসে না ঠিক কারণে মানুষের পুরো কমোডের রিংটা পানি দিয়ে সয়লাব করে রাখতে হয়। এরকম একটা ওয়াশ রুমে ঢুকার পর সেখানে থাকার রুচি হয় না। যিনি এভাবে ফেলে রেখে আসেন তার কিভাবে রুচি হয়? ঠিক কী প্রয়োজনে ওয়াশরুমের পুরো ফ্লোর পানিতে ভেসে যায়? রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, অফিস-আদালত, এয়ারপোর্ট কোনোটাই এই সংকট থেকে মুক্ত নয়। অফিসগুলোর HR ডিপার্টমেন্ট যদি প্রতি মাসে ২-১ টা সেশন নিত শুধু ওয়াশরুম পরিষ্কারের উপর!!! :'(
সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যখন হাই কমোডের রিঙের উপর স্পষ্ট ইউরিনের উপস্থিতি দেখা যায়। প্রায়ই এই কষ্টকর অভিজ্ঞতায় পড়তে হয়। হয়ত আগের ব্যবহারকারী দাঁড়িয়ে ইউরিনেট করেছেন। কয়েক ফোঁটা কমোডের রিঙে পড়ে আছে। সেভাবেই রেখে চলে গেছেন। শিক্ষিত (!) অভিজাত এলাকার ওয়াশরুমে যখন এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তখন হেদায়েতের দুআ করা ছাড়া আর কী-ই বা করার থাকে?
যেই ওয়াশরুমে অযু করার কথা না, সেখানেও অনেকে অযু করেন। অযুর পানিতে পুরো ফ্লোর সয়লাব হয়ে থাকে। অযু করলেও বা হাতমুখ ধোয়ার পর যেন নিজের সাধ্য মত ওয়াশরুম ক্লিন করে রেখে যাই। প্রয়োজনে ক্লিনারকে ডেকে এনে অনুরোধ করি ফ্লোর-বেসিন ক্লিন করে দিতে। নইলে আপনার আমার এই কাজের দ্বারা অন্যেরা কষ্ট পাবেন।
অনুগ্রহ করে টয়লেট ব্যবহার করা বিষয়ে শিবলী মেহেদী ভাইয়ের এই ভিডিওটি দেখুন।
কলিগদের স্যালারির খোঁজ না নেয়া
নিজের টিমের বা অফিসের অন্যান্যদের বেতনের পরিমান সম্পর্কে জানার চেষ্টা না করা উচিত। গোয়েন্দাগিরি না করা। অন্যের স্যালারি জেনে খুব বেশি লাভ নাই। আমি যতটা ডিজার্ভ করি সেটা পাচ্ছি কিনা এটা ইম্পর্টেন্ট। কলিগের স্যালারি জানলে শয়তান মনের মাঝে ওয়াসওয়াসা দিবে। আমার কলিগ একই টিমে কাজ করে আমার চেয়ে বেশি বেতন পেলে শয়তান তার বিরুদ্ধে আমার মনকে বিষিয়ে তুলতে পারে। যা টিমের মাঝে বন্ডিং নষ্ট করবে। নিজের গ্রোথের ক্ষেত্রেও এটা অন্তরায় হিসাবে দেখা দিবে।
রাগের মাথায় বস বা কলিগদেরকে রিপ্লাই না দেয়া
অনেক সময় দেখা যায় টিমের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। টিমলিডদের পক্ষ থেকে হয়ত কড়া ভাষায় মেইল আসে। এসব সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করার ক্ষেত্রে সময় নেয়া। রাগের মাথায় হুট করে একটা মেসেজ বা মেইল দিয়ে দেয়া ঠিক নয়। এতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
জব সুইচ করার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রসিডিউর মেইনটেইন করা
জব সুইচ করার ক্ষেত্রে প্রোপার ওয়েতে নির্দিষ্ট সময় আগে অফিসকে জানানো। এমন যেন না হয় হুট করে অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। এই সমস্যা সেই সমস্যা বলে ঘুরালাম। এটা একজন মুসলিমের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। একজন মুসলিম ব্যক্তি যে চুক্তি করেছে সেই চুক্তি রক্ষা করবে।
আল্লাহ আমাদেরকে এগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।