পোস্টটি পড়া হয়েছে 43,669 বার
পূজা দেখতে যাওয়ার বিধান

অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের বিধান

Post updated on 5th October, 2022 at 03:37 pm

ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র গ্রহনযোগ্য দ্বীন বা জীবন বিধান। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহনযোগ্য বা মনোনীত জীবন বিধান হচ্ছে ইসলাম”।[1] এছাড়া অন্যান্য জীবন বিধান বা ধর্ম বাতিল। তাহলে অন্যান্য ধর্মের মানুষদের প্রতি আমাদের মুআ’মালাত বা আচরণ-ব্যবহার কেমন হবে?

কুরআনে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন “তোমরা অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রভুদের গালি দিও না”।[2] তাদেরকে গালি দিলে তারা মনে কষ্ট পাবে এবং আমাদের প্রভু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’লাকেও গালি দিবে। এজন্য অন্য ধর্মের দেবতা, ধর্ম গ্রন্থ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে গালি দেয়া বা হেয় প্রতিপন্ন করা ইসলামে নিষিদ্ধ।

তাহলে আমরা কি তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাব? তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাব? সেটাও গ্রহনযোগ্য নয়! আজকের এই লেখায় আমরা জানার চেষ্টা করব পূজা দেখতে যাওয়ার বিধান বা অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব দেখতে যাওয়ার বিধান সম্পর্কে।

পূজা, বড় দিন ইত্যাদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উৎসব দেখতে যাওয়ার হুকুম – পূজা দেখতে যাওয়ার বিধান

আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষকে বলতে শোনা যায় “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”। এটা একটা অমানবিক ও অযৌক্তিক কথা। কোনো বিবেকবোধ সম্পন্ন ও মানবিক লোক এটা বলতে পারে না। ধর্মীয় বিশ্বাস যেই উৎসবের সাথে জড়িত থাকে সেই উৎসবকে সকলের জন্য সাধারণ করতে চাওয়া একটা হঠকারীতা। কারণ এক ধর্মের উপাসনা বা উৎসব আরেক ধর্মের ব্যক্তির ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই একমাত্র ধর্মহীন বা নাস্তিক ব্যক্তির পক্ষেই বলা সম্ভব “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”।

খলীফা হযরত উমর রা. বলেছেন “তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাক।”[3] অন্য বর্ণনায় তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন “কারণ এক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয়ে থাকে”।

মুসলিমদের জন্য জাস্ট দেখার জন্য বা মজা করার জন্য অন্য কোনো ধর্মের ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেয়া বৈধ নয়।

পূজা, বড়দিন বা অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান

অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে একজন মুসলিমের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো বৈধ নয়। কারণ আমরা এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে প্রভু বলে স্বীকার করি না। তাই আমরা যদি অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসবে শুভেচ্ছা জানাই। তাহলে প্রকারান্তে তাদের করা শিরকের উৎসবে আমরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তাদের কাছে যেটা তাদের ধর্মের ইবাদত, আমাদের কাছে সেটা আল্লাহর সাথে শিরক করা। তাই অন্য ধর্মের ইবাদতে আমাদের উপস্থিত থাকা বা তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো উচিত নয়।

আমরা কোনো হারাম কাজ হতে দেখলে কোনো মুমিন কি তা সেলিব্রেট করতে পারি? উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় কোথাও মদ খাওয়া হচ্ছে বা সুদের কারবার হচ্ছে বা কোথাও শুকরের মাংস খাওয়া হচ্ছে। আমরা মুমিনরা কি বলতে পারি “হ্যাপি ড্রিংকিং”? বা বলতে পারি “আপনাদের সুদ খাওয়া বা শুকর খাওয়া শুভ হোক”? কখনোই না! কারণ এগুলো আমাদের কাছে হারাম। আমরা কোনো হারামের ব্যাপারে শুভ কামনা জানাতে পারি না।

একই ভাবে আমরা অন্য ধর্মের কাউকে বাধ্য করতে পারি না আমাদের নামাজ, আমাদের ঈদে একাত্মতা জানাতে। হিন্দু ধর্মে গরু হত্যা করা নিষেধ। আমরা ঈদুল আজহার সময় গরু কুরবানি করি। তাদের ধর্মীয় অনুসাশনে কিন্তু এটা সাপোর্ট করবে না আমাদের কুরবানির ঈদে আমাদের গরু জবাইয়ের সময় সামনে থাকা বা শুভেচ্ছা জানানো। কারণ আমাদের কাছে এটা ইবাদত, কিন্তু তাদের কাছে এটা পাপ। তাই বলা হয় এক ধর্মের ইবাদত অন্য ধর্মের পাপ হিসাবে গণ্য হতে পারে। এজন্য আমরা বলবো “ধর্ম যার, উৎসবও তার”।

অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব পালনে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব

অন্য ধর্মের ধর্মীয় উপাসনা ও উৎসব পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মুসলিম সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে তারা যেন তাদের ধর্ম-কর্ম নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা। তাদের প্রতি কটুক্তি বা অসহযোগিতামূলক কোনো আচরণ করা কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। যেমনি ভাবে তাদের উৎসবে অংশগ্রহন ও শুভেচ্ছা জানানোও বৈধ নয়।

এক ধর্মের সাথে অপর ধর্মের অনুসারীদের সহাবস্থান এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের আপন আপন পূজা-আরাধনা নির্বিঘে পালন করতে সহযোগিতার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার। ইসলাম এতে পূর্ণ সমর্থন দেয় ও দায়িত্ব গ্রহণ করে। ইসলামের স্পষ্ট নীতি হচ্ছে, যে কোনো ধর্মাবলম্বী নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে তার ধর্ম পালন করুক। নিজস্ব পরিধির মধ্যে তার ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা তার রয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বরং তাদের নিজস্ব গণ্ডির ভেতরে থেকে এগুলো পালন করার জন্য ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে।[4]

আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার শিরক ও বিদআত থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।

তথ্যসূত্র

  1. সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯
  2. সূরা আন’আম, আয়াত ১০৮
  3. আসসুনানুল কুবরা, হাদীস ১৮৮৬২
  4. এক ধর্মের উৎসব অন্য ধর্মের জন্য নয় – মাসিক আলকাউসার
  5. দূর্গাপুজার অনুষ্ঠান দেখা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)
  6. পূজায় মুসলিমদের অংশগ্রহন ও খানা খাওয়ার বিধান – মুফতি লুৎফর রহমান ফরায়েজী
  7. দূর্গা পূজা দেখতে যাওয়া ও শুভেচ্ছা জানানো কি উদারতা? – শায়খ আহমাদুল্লাহ

11 thoughts on “অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের বিধান

    1. লেখাটি কপি করে শেয়ার করার অনুমতি নাই। অনুগ্রহ করে ব্লগ পোস্টের লিংক যে কারো সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

    1. আমি যা যা বলেছি তার তথ্যসূত্র উল্লেখ করা আছে। সেগুলোর মধ্যে কোনটা কোনটা মিথ্যা টু দি পয়েন্টে দলিল সহ উল্লেখ করুন। আমি সংশোধনের জন্য প্রস্তুত। আর যদি আপনি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকেন, তাহলে প্রস্তুত হয়ে যান আল্লাহর কাছে এর জবাবদিহিতার জন্য!

  1. Here in this article almost every thing is correct. But it is not in the Holly book of Hidus that their culture does not support killing of cow.
    May I know from which book of Hindus killing cow is prohibited.?
    Moreover, I have seen a video of Doctor’s Zakir Naik ,there he has quoted from Hindus holly book in reply to a question said that,the Hindu dead people will be satisfied and in peace for 1 years if cows are killed in their name .

    1. ভাই, এটা তাত্ত্বিক আলোচনার বিষয় হতে পারে যে, হিন্দুদের ধর্মীয় রীতিতে পশু জবাই করা নিষেধ কিনা। আমার এ বিষয়ে পড়াশোনা নাই, তাই আমি জানি না। হিন্দুদের রীতিনীতি দেখে যেটা বুঝা যায় গরু তাদের কাছে পূজনীয় একটি প্রাণী। ভারতে গরু হত্যা (!) বন্ধ করার লক্ষ্যে বহু কিছু তারা করছে (যদিও বিশ্বের অন্যতম প্রধান বিফ সাপ্লাইয়ার ইন্ডিয়া)। কুরবানীর ঈদে আমরা বেশির ভাগ মুসলিম গরু কুরবানী দিয়ে থাকি। উভয়টার মাঝে গরু কমন থাকায় এই উদাহরন নেয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, পোস্টের উদ্দেশ্য এটা আলোচনা করা যে হিন্দু শাস্ত্রে গরু জবাই বৈধ কিনা। এটা এই পোস্টের দূরতম কোনো প্রাসঙ্গিক বিষয়ও নয়। ডাক্তার জাকির নায়েকের লেকচার থেকে এটাও জানা যায় যে হিন্দু ধর্মে মূর্তি বানানো, মূর্তি পূজা ও অসংখ্য দেব-দেবীর কনসেপ্টও তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোর বিপরীত।

  2. আপনাদের পোস্ট গুলো আমি কি কপি করে প্রচার করতে পারি

    1. লেখাটি কপি করে শেয়ার করার অনুমতি নাই। অনুগ্রহ করে ব্লগ পোস্টের লিংক যে কারো সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *