পোস্টটি পড়া হয়েছে 165,900 বার

আইয়ামে বীজ এর রোজা – ফজিলত, বিধান ও মাসআলা

Post updated on 20th August, 2024 at 09:11 pm

রামাদানের রোজা ছাড়াও সারা বছর অনেকগুলো নফল রোজা রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ নফল রোজা হচ্ছে আইয়ামে বীযের রোজা। প্রতি মাসে ৩ দিন আইয়ামে বিযের রোজা রাখলে তাতে পুরো মাস রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। নবীজি (সা) সারা বছর এই রোজা রাখতেন। এর থেকে আইয়ামে বীজের ফজিলত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আজকের এই পোস্টে আইয়ামে বীজের রোজা কবে, এর ফজিলত, বিধান ও মাসআলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব ইনশাআল্লাহ।

এ মাসের আইয়ামে বীজের রোজার তারিখ

চলতি মাস সহ প্রতি মাসের আইয়ামে বীজের তারিখ সম্পর্কে জানতে আমাদের ডেভেলপ করা মুসলিমস ডে অ্যাপটি ইন্সটল করতে পারেন। সেখানে প্রতি মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর হিজরি ক্যালেন্ডার আপডেট করা হয়। অ্যাপ থেকে হিজরি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ কোন কোন দিন হবে সেটি জেনে নিতে পারবেন।

এছাড়াও মুসলিমস ডে ব্লগের এই পোস্টেও প্রতি মাসের রোজার ইংরেজি তারিখ আপডেট করা হয়।

আইয়ামে বীজের রোজা কাকে বলে? আইয়ামে বীজের রোজা কবে?

আইয়ামে বীজ আরবি দু’টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। আইয়ামে অর্থঃ দিবসসমূহ। আর বীজ অর্থঃ শুভ্র, সাদা, শ্বেত, খাঁটি, নির্ভেজাল।

প্রতি হিজরি মাস বা চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখকে আইয়ামে বীজ বলা হয়। কেননা এই তিনদিনের রাতের চাঁদ সবচেয়ে বেশি আলোকজ্জল বা শ্বেত-শুভ্র থাকে। আইয়ামে বীজ বলতে বুঝানো হয় চান্দ্র মাসের সবচেয়ে শুভ্র বা আলোকজ্জল তিনটি রাতের সাথে সংশ্লিষ্ট দিনকে।

আমরা জানি হিজরি মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। তাই প্রতি মাসের আইয়ামে বীজের রোজার তারিখ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে নির্ধারিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশের অনেকে না জানা বা না বুঝার কারণে আইয়ামে বীজের রোজা রাখেন কাগজে ছাপানো ক্যালেন্ডারে থাকা আনুমানিক হিজরি তারিখ হিসাবে। যা সঠিক বা ভুল উভয়টিই হতে পারে। অর্থাৎ ইংরেজি বছরের শুরুতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে যে ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হয় সেখানে হিজরি তারিখ থাকে অনুমান নির্ভর। প্রতিটি ক্যালেন্ডারেই উল্লেখ থাকে যে, হিজরি তারিখগুলো চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। তাই আমরা কাগজে ছাপানো ক্যালেন্ডারের উপর নির্ভর করে আইয়ামে বীজের রোজা রাখলে তা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আমাদের উচিত হিজরি মাসের চাঁদ ওঠার খবরের সাথে নিয়মিত আপডেট থাকা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতি মাসে চাঁদ দেখা যাওয়ার ঘোষণা তাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে থাকে। আর আপনার জীবনকে আরেকটু সহজ করতে ব্যবহার করতে পারেন আমাদের ডেভেলপ করা Muslims Day Android App. এই অ্যাপে আমরা প্রতি মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার খবর নোটিফিকেশন আকারে পাঠিয়ে থাকি। পাশাপাশি অ্যাপে নিয়মিত হিজরি তারিখ আপডেট করা হয়। আমাদের অ্যাপ থেকে নিয়মিত ভাবে সারা বছর আইয়ামে বীজের রোজার রিমাইন্ডার পাঠানো হয় নোটিফিকেশন আকারে। তাই আপনি যদি আইয়ামে বীদ এর রোজা রাখতে চান তাহলে মুসলিমস ডে অ্যাপটি আপনাকে সারা বছর ইনশাআল্লাহ রোজা রাখতে সহযোগিতা করবে। আর আইয়ামে বীজের রোজার সাহরি ও ইফতারের সময়ও আমাদের অ্যাপ থেকেই জানা যাবে।

আইয়ামে বীজের রোজার বিধান

আইয়্যামে বীজের রোজা আমাদের উপর ফরজ নয়। এটি নফল রোজা। অর্থাৎ আইয়ামে বীজের রোজা রাখলে সওয়াব আছে, কিন্তু না রাখলে গুনাহ নাই। ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি আমাদের উচিত নফল ইবাদতেও মনযোগ দেয়া। কারণ ফরজ পালন করতে গিয়ে কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি হলে বা কোনো ফরজ অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছুটে গেলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের নফল আমলগুলোর মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করে দিতে পারেন। তাই বছরের বিভিন্ন সময়ে যে সকল নফল রোজা রয়েছে সেগুলো আদায়ে যত্নবান হওয়া উচিত।

আইয়ামে বীজের রোজার ফজিলত

প্রতি মাসে ৩ দিন বা আইয়ামে বীজের রোজা রাখলে তাতে সারা মাস রোজা রাখার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। নিয়মিত ভাবে আইয়ামে বীজের ৩ দিন রোজা রাখা হচ্ছে সারা জীবন রোজা রাখার সমতূল্য। কেননা যে কোনো নেক আমল আল্লাহ তায়ালা ১০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দিয়ে থাকেন। আমরা যদি প্রতি মাসে নিয়মিত ভাবে ৩ দিন রোজা রাখি তাহলে ৩x১০=৩০ দিন রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। অর্থাৎ আমরা যদি প্রতি মাসেই ৩ দিন করে রোজা রাখি পুরো মাসটাই রোজা রাখার সওয়াব পাব। আর যত দিন বেঁচে আছি এভাবে রোজা রাখতে থাকলে আমরা ইনশাআল্লাহ সারা জীবন রোজা রাখার সওয়াব পাব। সুবহানাল্লাহ!

অনেক আলেম বলে থাকেন, কোনো একটা আমল কবুল হওয়ার আলামত হচ্ছে সে আমলটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। আমরা যদি রমজানের রোজার পাশাপাশি অন্যান্য মাসেও কিছু নফল রোজা রাখতে পারি তাহলে সেটি হতে পারে আমাদের রমজানের রোজা কবুল হওয়ার আলামত। আর রমজানের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ হচ্ছে রোজা। রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি তাক্বওয়া, ভয় ও আনুগত্য করা। রোজা এমন একটা ইবাদত যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই রাখা হয়। আর আল্লাহ নিজে এর প্রতিদান দিবেন। তাই রমজানের রোজার যে প্রশিক্ষণ আমরা নিয়েছি, সেটা সারা বছর কিছু কিছু করে প্র্যাক্টিস চলমান রাখা উচিত। রমজানে যেভাবে আমরা রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহমুখী হই। একই ভাবে আইয়ামে বীজের রোজার মাধ্যমেও প্রতি মাসে ৩টা দিন আমরা একান্তই আল্লাহর জন্য ৩টা রোজা রাখতে পারি।

পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবারও নবীজি (সা) গুরুত্ব সহকারে নিয়মিত রোজা রাখতেন। এখানে ক্লিক করে জেনে নিন নবীজি (সা) কেন প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন?

এত অল্প পরিশ্রমে আল্লাহ আমাদেরকে এত দিবেন! আমাদের মধ্যে কে এমন আছেন যিনি এই সুবর্ণ সুযোগকে হেলায় নষ্ট করবেন? আমার ধারণা এই লেখাটি পড়ার পর ইনশাআল্লাহ আপনি বাকি জীবন যতদিন সুস্থ্য আছেন নিয়মিত এই পুণ্যময় আমলটি করেই যাবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাসে ৩ দিন রোজা রাখার মাধ্যমে সারা মাস রোজা রাখার সওয়াব লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

আইয়ামে বীজের রোজার গুরুত্ব ও ফজিলতঃ হাদীস ১ 

ইবনু মিলহান আল-ক্বায়সী (রহঃ) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, 
 
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আইয়ামে বীয অর্থৎ চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সওম পালনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এগুলো সারা বছর সওম রাখার সমতুল্য। 
 
– আবু দাউদ ২৪৪৯, হাদীসের মানঃ সহীহ

আইয়ামে বীজের রোজার গুরুত্ব ও ফজিলতঃ হাদীস ২

জারীর ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ 
 
প্রত্যেক মাসের তিন দিন সাওম (রোযা) পালন করা সারা জীবন সাওম (রোযা) পালন করার সমতুল্য। আর আইয়ামে বীয -তের তারিখের সকাল থেকে চোদ্দ এবং পনের তারিখ পর্যন্ত। 
 
– নাসায়ী ২৪২০, হাদীসের মানঃ হাসান

আইয়ামে বীজের রোজার গুরুত্ব ফজিলতঃ হাদীস ৩

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমার বন্ধু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, 
প্রতি মাসে তিন দিন করে সওম পালন করা এবং দুই রাকাত সালাতুদ দুহা এবং ঘুমানোর পূর্বে বিতর সালাত আদায় করা। 
– বুখারী ১৯৮১, হাদীসের মানঃ সহীহ

প্রতি মাসে ৩ টি রোজার গুরুত্বঃ হাদীস ৪

‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি মাসের প্রথম দিকে তিনদিন সওম পালন করতেন।

– আবু দাউদ ২৪৫০, হাদীসের মানঃ হাসান

প্রতি মাসে ৩ টি রোজার গুরুত্বঃ হাদীস ৫

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আমর ইব্‌নুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ 

হে ‘আবদুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সওম পালন কর এবং সারা রাত সালাত আদায় করে থাকো। আমি বললাম, ঠিক (শুনেছেন) হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেনঃ এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে) সওম পালন করো আবার ছেড়েও দাও। (রাতে) সালাত আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হাক্ব রয়েছে, তোমার চোখের হাক্ব রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হাক্ব আছে, তোমার মেহমানের হাক্ব আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সওম পালন কর। কেননা নেক ‘আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সওম হয়ে যায়। আমি (বললাম) আমি এর চেয়েও কঠোর ‘আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন ‘আমলের অনুমতি দেয়া হল। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি আরো বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃ তবে আল্লাহ্‌র নবী দাউদ (আঃ)-এর সওম পালন করো, এর হতে বেশী করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্‌র নবী দাউদ (আঃ)-এর সওম কেমন? তিনি বললেনঃ অর্ধেক বছর। রাবী বলেনঃ ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বৃদ্ধ বয়সে বলতেন, আহা! আমি যদি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবূল করে নিতাম !
 
– বুখারী ১৯৭৫, হাদীসের মানঃ সহীহ

প্রতি মাসে ৩ টি রোজার গুরুত্বঃ হাদীস ৬

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন স্ত্রী থেকে বর্ণিত যে,
 
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জ মাসের নয় দিন, আশুরার দিন এবং প্রত্যেক মাসের তিন দিন সাওম পালন করতেন-মাসের প্রথম সোমবার এবং দুই বৃহস্পতিবার।
 
– সুনানে নাসায়ী ২৪১৯, হাদীসের মানঃ সহীহ

আইয়ামে বীজ বা নফল রোজা সম্পর্কে কয়েকটি মাসআলা

  1. রমজানের রোজার মত আইয়ামে বীজের রোজার ক্ষেত্রেও সাহরি খাওয়া সুন্নাহ। কিন্তু সাহরি খাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। অনেকে ধারণা করে থাকেন সাহরি খাওয়া ছাড়া রোজা হয় না। সে ধারণাটি ভুল। সাহরির জন্য পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়। এক ঢোক পানি পান করলেও তাতে সাহরির সুন্নাহ আদায় হয়ে যাবে।
  2. আইয়ামে বীজ সহ যে কোনো নফল রোজার নিয়ত বা সংকল্প করা যাবে সর্বোচ্চ দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত। মধ্যভাগ হিসাব করতে হবে সাহরির শেষ সময় থেকে ইফতারের সময় পর্যন্ত যে সময় হয় তার অর্ধেক পর্যন্ত। সাহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত যদি ১৪ ঘন্টা সময় হয়ে থাকে তাহলে সাহরির শেষ সময়ের পর থেকে ৭ ঘন্টা পর্যন্ত নিয়ত করলে রোজা শুদ্ধ হবে। এর পরে নিয়ত করলে রোজা হবে না। সাহরির পরে এই ৭ ঘন্টার মধ্যে নিয়ত করলেও শর্ত হচ্ছে সাহরি থেকে এই নিয়ত করার সময়ের মধ্যে রোজা ভঙ্গ হওয়ার মত কোনো কাজ করা যাবে না। অনেকের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে সাহরির সময় উঠতে পারে নি পরে ফজরের সময় উঠেছে বা আরো পরে উঠেছে। এরপর চিন্তা করল আজকের দিনটি রোজা রেখে ফেলব। এরকম পরিস্থিতিতে কখন রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম সেটা হিসাব করে বের করা জরুরি। সহজ কথায় রোজাটি অর্ধেক পূর্ণ হওয়ার আগেই নিয়ত করতে হবে।
  3. আইয়ামে বীজের তারিখগুলোতে নারীদের পিরিয়ড চললে তখন ঐ দিনগুলোতে রোজা রাখা যাবে না। নারী-পুরুষ যে কারোরই যে কোনো সমস্যার জন্য আইয়ামে বীজের ৩ দিন রোজা না রাখতে পারলে মাসের অন্য যে কোনো ৩ দিন রোজা রাখলেও সারা মাস রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। কেননা মাসের যে কোনো ৩ দিন রোজা রাখলে সারা মাসের সওয়াব পাওয়া যাবে এটাও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
  4. আইয়ামে বীজ বা কোনো নফল রোজা রাখা অবস্থায় যদি নারীদের পিরিয়ড শুরু হয় তাহলে ঐ রোজাটি ছেড়ে দিবে। দিনের বাকি অংশ স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে। পিরিয়ড শুরু হওয়ার কারণে নফল রোজা ভেঙে ফেললে দিনের বাকি অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকা জরুরি নয়। শুধুমাত্র রমজান মাসের ক্ষেত্রে রোজা অবস্থায় পিরিয়ড শুরু হলে ঐদিনটি ইফতার পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এটা রমজান মাসের সম্মানে। এরপর রমজানের বাকি দিনগুলোতে পিরিয়ড চলা অবস্থায় স্বাভাবিক পানাহার করতে পারবে। কিন্তু নফল রোজা রাখা অবস্থায় পিরিয়ড শুরু হলে তখন থেকেই পানাহার করা যাবে।
  5. আইয়ামে বীজের কোনো একটি রোজা শুরু করার পর যদি কোনো কারণে ভেঙে ফেলা হয় তাহলে পরবর্তীতে ঐ রোজাটির কাজা আদায় করতে হবে। রোজা শুরু করার পর ভেঙে ফেললে ঐ রোজার কাজা আদায় করা ওয়াজিব হয়।
  6. জিলহজ্জ মাসের ১০ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত (ঈদ উল আযহা ও তার পর ৩ দিন) রোজা রাখা হারাম। তাই জিলহজ্জ মাসের ১৩ তারিখ আইয়ামে বীজের রোজা রাখা যাবে না। জিলহজ্জের ১০ থেকে ১৩ তারিখ ব্যতীত অন্য যে কোনো ৩ দিন রোজা রাখলেও সারা মাস রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে।
  7. আইয়ামে বীজের ৩ দিনের মধ্যে শুক্রবার পড়লে অনেকে দ্বিধান্বিত থাকেন যে শুক্রবার রোজা রাখা যাবে কিনা। হাদীস শরীফে শুধুমাত্র শুক্রবারকে উদ্দেশ্য করে রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে (হারাম করা হয় নি, এটা মাকরুহে তানযিহী)। আর যদি শুক্রবারের সাথে আগে-পরে একদিন রোজা রাখা হয় তাহলে শুক্রবার রোজা রাখাতে কোনো অসুবিধা নাই। এক্ষেত্রে আগের নিরুৎসাহ দেয়ার হুকুম আরোপিত হবে না। একই ভাবে শুক্রবার যদি অন্য কোনো বিশেষ নফল রোজার দিন হয়, যেমনঃ আরাফার দিন বা আশুরার দিন। সেক্ষেত্রেও শুক্রবার রোজা রাখাতে কোনো অসুবিধা নাই।
আল্লাহ আমাদের সকলকে প্রতি চান্দ্র মাসের মাঝের তিন দিন আইয়ামে বীজের সিয়াম অথবা মাসের যে কোনো ৩ দিন রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন।
 
দাওয়াহ এর নিয়তে চাইলে পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আমাদের কারো মাধ্যমে উক্ত আমলটি কেউ শুরু করলে ইনশাআল্লাহ আপনি এর দ্বারা সাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পেতে থাকবেন।

তথ্যসূত্র

  1. শাওয়ালের ৬ রোযা সোম বৃহস্পতিবার রাখলে কি ডাবল সওয়াব? – শায়খ আহমাদুল্লাহ

51 thoughts on “আইয়ামে বীজ এর রোজা – ফজিলত, বিধান ও মাসআলা

  1. মাশাআল্লহ খুবই ভালো লেখা।
    এভাবে নিয়মিত নতুন লেখা পেলে ভালোই হয়

  2. মাশাল্লাহ আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে ভালো কিছু তথ্য জানলাম আল্লাহ আপনাদেরকে নেক হায়াত দান করুক আমিন

  3. আসসালামু আালাইকুম। জাজাকাল্লাহ্ খাইরান। খুবই চমৎকার একটা বিষয় জানা হল। আাপনাদের প্রেরিত পোষ্টগুলি থেকে অনেক উপকৃত হই, এবং অনেক অজানা বিষয় জানতে পারি।

  4. আসসালামু আালাইকুম। জাজাকাল্লাহ্ খাইরান। খুবই চমৎকার একটা বিষয় জানা হল। আাপনাদের প্রেরিত পোষ্টগুলি থেকে অনেক উপকৃত হই, এবং অনেক অজানা বিষয় জানতে পারি।

  5. বিস্তারিত বলার জন্য জাজাকাল্লাহ খাইরান

  6. খুব সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন লেখা এবং অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ননা মাশাল্লাহ খুব ভাল লাগল।

  7. মাসাললাহ. অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা রাখি ভবিষ্যতে তথ্য নিরভর অনেক উপকৃত আমল সমপকে
    গেয়ান লাভ করতে পারবো ।

  8. প্রচার নয় ক্রেডিট নেয়াই মূল উদ্দেশ্য!

    1. তার মানে আপনি আমার উদ্দেশ্য বা নিয়ত সম্পর্কে জেনে গিয়েছেন। আপনি কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত? এ ব্যাপারে আপনার কাছে সকল তথ্য-প্রমাণ রয়েছে? কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে এটা প্রমাণ করতে পারবেন তো?
      আপনার কমেন্ট পড়ে অন্যান্য পাঠকগণ বুঝবেন না আপনার মোটিভ কী? অন্যান্য পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তাই মূল বিষয়টি এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করছি।

      কমেন্ট করা ব্যক্তি জনৈক সাহেদ সাহেব হাইমচর নিউজ নামক একটি অনলাইন পোর্টালের সাথে সংশ্লিষ্ট। উক্ত পোর্টালে আমাদের ডেভেলপ করা Muslims Day অ্যাপের থেকে অনেকগুলো পোস্ট হুবহু কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। এই পোস্ট চুরির প্রতিবাদ করায় তিনি আমার “উদ্দেশ্য” নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

      আল্লাহ ইনাদেরকে হেদায়েত দান করুন। নিজ যোগ্যতায় সাংবাদিকতা ও রিপোর্টিং করার তাওফিক দান করুন। অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার জালিয়াতি থেকে তাদেরকে হেফাজত করুন।

  9. মাশাআল্লাহ্ আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।
    সামনের দিকে আরও ভালো মাসালা পাবো এই আশাবাদ রাখি।

  10. আযান ও ইকামতের সময় কতটুকু এপস এ এড করলে সুবিধা হতো।

    1. প্রতিটি মসজিদের আজান ও জামায়াতের সময় ভিন্ন। সকল মসজিদের আজান আর জামায়াতের সময় আমরা কিভাবে জানব? বরং যিনি যেই এলাকায় আছেন সেই এলাকার মসজিদের আজান শোনা বা জামায়াতের সময় জেনে নেয়া খুব বেশি কঠিন হওয়ার কথা নয়।

  11. ধন্যবাদ সবাইকে। সুন্দর ভাবে বলা হয়েছে।

  12. আয়ামে বিজের দিন কাযা রোজার নিয়ত করে রোজা রাখা যাবে?

    1. কাযা রোজার নিয়ত করলে কাযা রোজা আদায় হবে। আইয়ামে বীজের ইন্টেনশন নিয়ে রোজা রাখলে আইয়ামে বীজের রোজা আদায় হবে।

  13. এখান থেকে কপি করা যায় না কেনো?

    1. কপি করার ফিচার বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে আর্টিকেলের লিংক অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।

  14. আস সালামুআলাইকুম। সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় সুন্দরভাবে বলা হয়েছে। আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

  15. বলা হয়েছে প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা রাখতে কোন তিন দিন রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে

  16. চন্দ্র মাসের রোযা কোন কোন তারিখে কোন মাসে

    1. আইয়ামে বীজের ৩ দিনের রোজা হলো চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। এ মাসের রোজার তারিখ পোস্টে দেয়া আছে

    1. পোস্টটি পড়ে থাকলে এটা ক্লিয়ার হয়ে যাওয়ার কথা। কুরবানির সাথে এই রোজার কোনো সম্পর্ক নাই। প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ এই নফল রোজা রাখতে হয়

  17. আলহামদুলিল্লাহ আমরা এই এপের মাধ্যমে ভালো ভালো জিনিস সেকতে পারি

  18. ঈদে মিলাদুন্নবী(সা) তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের সুসংবাদ শুনে কোনো ব্যক্তি যদি খুশি না হতে পারে সে মুসলমান কিনা সে বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম এবং খাঁটি মুসলমানদের মনে সন্দেহ হয়।

    1. সন্দেহটা কি যারা আমরা বিদআতী রসম “ঈদে মিলাদুন্নবী” উদযাপন করি না তাদের ব্যাপারে? নাকি সাহাবীগণও যে এটা উদযাপন করতেন না তাদের ব্যাপারেও সন্দেহ হয়? নবীজি (সা) জীবিত থাকতে আপনাদের মত জশনে জুলুশ কয়বার অনুষ্ঠিত হয়েছে? কয়টা হাদীসে ১২ রবিউল আউয়ালকে ঈদ এবং আনন্দ প্রকাশের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে? নবীজির (সা) জন্ম তারিখ নিয়ে ১২টির অধিক মত রয়েছে। ইসলামে জন্মদিন পালন করার শরয়ী কোনো নীতি থাকলে অবশ্যই নবীজি (সা) বলে যেতেন তাঁর জন্মের তারিখ। আমরাও সেদিন ঈদ পালন করতে পারতাম। কিন্তু তিনি, তাঁর সাহাবীগণ, তাবেয়ীগণ, তাবে-তাবেয়ীগণ কেউই এই দিনকে ঈদ হিসাবে পালন করলেন না। ৬০০ হিজরিতে এসে এক শীয়া ধর্মের অনুসারী শাসকের নির্দেশে এই উদযাপন শুরু হলো। আর আপনারাও হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও ইহুদী সম্প্রদায়ের জন্মদিনের রীতি অনুসরণ করে ঈদ উদযাপন শুরু করলেন।

      যেহেতু আইয়ামে বীজের পোস্টে এই কমেন্ট করেছেন। তাই দাওয়াত দিচ্ছি আগামীকাল ১০ অক্টোবর থেকে ৩ দিন নফল রোজা আছে। নবীজি (সা) সারা জীবন এই রোজা রেখেছেন। আপনি যেহেতু নবীজির (সা) আগমনে খুব খুশি, খুশির চোটে একটা বিদআতের অনুসরণ করতেও পিছপা হচ্ছেন না। তাই আগামী ৩ দিনও কাইন্ডলি রোজাগুলো রাখুন। এটা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত সুন্নাহ। রাসূলের (সা) ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে তাঁর অনুসরণ করা। এই সুন্নাহটি অনুসরণ করার আহ্বান রইলো। বিদআত পরিত্যাগের আহ্বান রইলো।

      ইসলামকে নবীজির (সা) চেয়ে এবং তাঁর সাহাবীগণের চেয়ে বেশি বুঝতে গেলে বিপদ আছে। নবীজিকে (সা) সাহাবীগণ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। আমরা যদি বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করতে যাই, তাহলে খৃষ্টানদের মত পথভ্রষ্ট হওয়ার আশংকা আছে। ভক্তির চোটে খৃষ্টানরা ঈসা (আ) কে ঈশ্বর বানিয়ে ফেলেছে।

  19. যে সকল মুসলমান “ ঈদে মিলাদুন্নবী “, ” শ’বে বরাত” প্রভৃতি যাকজমকের সাথে পালন করে এবং ” আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা সাইয়িদিনা” নামের দরুদ দলবেধে পাঠ করে সে সকল মুসলমানেদের কাছে আমার জানতে ইচ্ছা করে আমদের নবী (সঃ) তাঁর জীবদ্দশায় কতবার এগুলো পালন করেছেন দয়া করে তার সহীহ দলিল পেশ করুন।

  20. মা শা আল্কাহ!
    মুসলিম ডে অ্যাপ এখন আমার যাপিত জীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে,আলহামদুলিল্লাহ।
    ফরজ,ওয়াজিবের বাইরে ফজিলতপূর্ণ নফল ইবাদাত সম্পর্কে হাসান ভাই মুসলিম অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের কাছে যে দাওয়াহ্ ছড়িয়ে দিচ্ছেন,তার কোনো তূলনা হয় না সত্যি!
    আল্লাহ তায়া’লা হাসান ভাইয়ের এ উদ্যােগ এবং আমাদের আ’মালগুলিকে ক্ববুল করে নিন,আমিন

  21. আপনাদের এই ওয়েবসাইট টি আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক তর্থ পাওয়া যায় যা একজন মুসলমানেরজন্য অনেক প্রয়োজনীয়, আপনাদের সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি।

  22. আসসালামু আলাইকুম
    আচ্ছা আমি গ্রিক সাইপ্রাস থাকি তাহলে এখন এখানের কবে থেকে রোজা রাখা শুরু কবরো

    1. সাইপ্রাসের হিজরি তারিখ আমার জানা নাই। গুগলে সার্চ করে দেখলাম সাইপ্রাসে ২৭ জানুয়ারি রজব মাসের ৫ তারিখ। সে হিসাবে সাইপ্রাসের আইয়ামে বীজের রোজা ৪, ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা। আপনার আসেপাশের মসজিদ বা মুসলিম কম্যুনিটি থেকে স্থানীয় হিজরি তারিখ জেনে নিতে পারেন। না জানা গেলে মাসের যে কোনো ৩ দিন রোজা রাখতে পারেন। তাতেও ৩০ দিন রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

  23. আইয়ামে বীজের রোজা ১৩-১৪-১৫ পরপর না রেখে ভেঙ্গে ভেঙ্গে রাখা যাবে কিনা?

    1. পোস্টের মাঝেই আপনার প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। কাইন্ডলি পোস্টটি আরেকবার পড়তে পারেন।

  24. এ মাসে আইয়ামে বীজের রোজার আপডেট নেই। উল্লেখ আছে জানুয়ারি মাসের কথা।

  25. রোজা রাখতে হবে শনিবার দিবাগত রাতে সাহরি খেতে হবে।।আপনাদের এখানে শুক্রবার লেখা রয়েছে।

  26. জাযাকুমুল্লাহু খায়র, আল্লাহ আপনাদের এ মহান খিদমাহ কবুল করে উম্মাহর কল্যাণে কাজ করার এ ধারা অব্যাহত রাখার তৌফিক দান করুন

  27. শ‌বে বরা‌তের রোযার তা‌রিখ নি‌য়ে একটা পোস্ট চাই।

  28. চমৎকার কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা হল।ধন্যবাদ, এমন সুন্দর মাসআলা দেওয়ার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *