পোস্টটি পড়া হয়েছে 464 বার
নীল দরিয়ার নামে - শিশুতোষ ইসলামী বই রিভিউ

নীল দরিয়ার নামে – [বই রিভিউ – ২]

Post updated on 21st February, 2020 at 09:39 am

হযরত উমার (রা) এর খিলাফতের সময় আমর ইবনুল আস (রা) মিসরের গভর্নর। একদিন মিসরের কয়েকজন লোক গভর্নরের সাথে দেখা করে তাদের একটা নিয়মের কথা বলল। তারা বলল মিসরের পাশ দিয়ে যেই নীল নদ বয়ে যাচ্ছে তার একটা নিয়ম আছে। তা হচ্ছে এ মাসের বারটি রাত পূর্ণ হলে একজন সুন্দরী যুবতী মেয়েকে উন্নত পোশাক আর গয়না পরিয়ে নীল নদে ফেলে দিতে হয়। তাহলেই এই নীল নদে পানি বইতে শুরু করে। এমনটা না করলে নীল নদের পানি শুকিয়ে যাবে। এমন অমানবিক কুসংস্কার শুনে আমর ইবনুল আস (রা) এটা মেনে নিলেন না। বললেন ইসলামে এরকম কুসংস্কারের কোনো স্থান নাই। সেই লোকজন চলে গেল।

এরপর আস্তে আস্তে নীল নদের পানি কমতে শুরু করল। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস জুড়ে পুরো নদী একদম শুকনা খটখটে হয়ে গেল। ফলে মানুষজন পানির অভাবে এ এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া শুরু করল। গভর্নর বিষয়টা মুসলিম বিশ্বের খলিফা হযরত উমারকে (রা) চিঠি লিখে জানালেন। হযরত উমার (রা) উত্তরে বললেন আমর ইবনুল আস (রা) যা করেছেন একদম সঠিক। একই সাথে একটা চিরকুট পাঠালেন এবং বললেন চিরকুটটি নীল নদে ফেলে দিতে।

সে চিরকুটে লেখা ছিলঃ

“আল্লাহর বান্দা উমার-আমিরুল মু’মিনিনের পক্ষ থেকে মিসরের নীল দরিয়ার নামে। অতঃপর কথা হচ্ছে, হে নীল নদ! তুমি যদি তোমার শক্তিবলে প্রবাহিত হয়ে থাক তাহলে তোমার আর প্রবাহিত হওয়ার প্রয়োজন নাই। আর যদি মহান পরাক্রমশালী এক আল্লাহ তোমাকে প্রবাহিত করে থাকেন তাহলে আমরা সেই আল্লাহর দরবারেই প্রার্থনা করছি তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করে দেন।” 

যেদিন আমর ইবনুল আস (রা) এই চিঠি পেলেন সেদিন খৃষ্টানদের ঈদ অনুষ্ঠানের এক দিন বাকি। সকলেই নতুন জায়গায় চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমর ইবনুল আস (রা) চিরকুটটি দরিয়ায় ছুঁড়ে মারলেন। অমনি আল্লাহর রহমতে নীল নদে পানি প্রবাহিত হওয়া শুরু হলো! সুবহানাল্লাহ!

চিন্তা করুন তো, আমাদের শিশু-কিশোররা এমন গল্পগুলো পড়তে পড়তে বেড়ে উঠলে তাদের শিশু মনে এর কী প্রভাব পড়তে পারে? ইনশাআল্লাহ তারা এরকম গল্পের মাধ্যমে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা শিখবে। শিখবে ইসলামে কুসংস্কারের কোনো স্থান নাই।

শিশু-কিশোরদের উপযোগি করে লিখা গল্প সংকলন গ্রন্থ নীল দরিয়ার নামে। গল্পগুলো লিখেছেন সুসাহিত্যিক ও প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার মাওলানা মুহাম্মাদ যাইনুল আবিদীন। উপরোল্লেখিত হাদীসের গল্পটি এই বইয়ের প্রথম গল্প। এই গল্পের নামেই বইয়ের নামানুকরণ করা হয়েছে নীল দরিয়ার নামে

বই সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য

বইয়ের লেখাগুলো বিভিন্ন পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে সেগুলোকে একত্রে মলাটবদ্ধ করা হয়।

বইটি প্রকাশ করেছেঃ মাকতাবাতুল আশরাফ

বইয়ে গল্প সংখ্যাঃ ১১

পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫৯

তৃতীয় সংস্করণঃ ২০০৭ সালে

মুদ্রিত মূল্যঃ ১০০ টাকা

অনলাইনে অর্ডার করে বইটি কেনা যাবে নিয়ামাহ বুকশপ থেকে।

আমার মতে বইটি ৮-১০ বছর থেকে উপরের বাচ্চাদের উপযোগি। গল্পগুলো যেহেতু বেশির ভাগই হাদীস বা কুরআন থেকে নেয়া হয়েছে তাই সে সংশ্লিষ্ট টার্ম বা পরিভাষা কোথাও কোথাও ব্যবহৃত হয়েছে। তাই ভাল হবে বাচ্চাদেরকে বইটি পড়তে দিয়ে পাশে মা-বাবা বা বড় কেউ থাকা। যেন কোনো শব্দ বা বাক্য বুঝতে সমস্যা হলে তাকে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেয়া যায়।

বইয়ের লেখক, প্রকাশক ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদানের দুআ রইল।

সকল পাঠকের কাছে আন্তরিক অনুরোধ, আপনার দুআয় আমাকে রাখবেন। আল্লাহ যেন আমার ও আমার পরিবারের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সুখ ও প্রশান্তি দান করেন, যেন সকল পেরেশানী দূর করে দেন। আল্লাহ যেন আমাকে লোক দেখানো কাজ করা থেকে বিরত রাখেন। আল্লাহ যেন আমাকে ঋণগ্রস্থ না করে দেন। আল্লাহ যেন দুনিয়া ও আখিরাতে আমার দোষত্রুটি গোপন করেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইলম অর্জন ও সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *