About Me

Post updated on 12th October, 2025 at 11:38 am

Hasan Abdullah
লাল পাহাড়, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার | ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২

১৯৯১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম এই দুনিয়ার আলো দেখি।

প্রথমে নাম রাখা হয়েছিল রশিদুল হাসান সজিব। পরে কিছু কারণে নাম চেঞ্জ করে রাখা হল আবদুল্লাহ আল হাসান।  আর উচ্চারণের সুবিধার্তে ফেসবুকে আমি নাম ব্যবহার করি হাসান আবদুল্লাহ

ঢাকায় থাকি। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ। ৩ ভাই বোনের মধ্যে আমি সবার বড়।

B.Sc অনার্স করেছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা সিটি কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে। মাস্টার্স শেষ করেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের CSE ডিপার্টমেন্ট থেকে।

বর্তমান কর্মক্ষেত্র

বর্তমানে মুসলিমস ডে অ্যাপের CEO হিসাবে কর্মরত আছি। ২০১৫ সাল থেকে সাইড প্রোজেক্ট হিসাবে অ্যাপটি নিয়ে কাজ করছি। ২০২৫ সালে কাহফ এর সাথে অ্যাপটির মাধ্যমে পার্টনারশিপ হয়। ফুলটাইম জব হিসাবে এপ্রিল ২০২৫ থেকে আমি মুসলিমস ডে’তে কাজ করছি।

বিগত কর্মক্ষেত্রসমূহ

১৬ এপ্রিল, ২০১৭ থেকে Associate Software Engineer হিসাবে জব শুরু করেছিলাম মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Inovio এর ঢাকা অফিসে। এরপর ১লা আগস্ট, ২০১৭ তে আমাকে নিয়ে আসা হয় Inovio’র একজন কো-ফাউন্ডারেরই আরেকটি কোম্পানি AlemHealth এ। এটি একটি হেলথ কেয়ার সার্ভিস। নাইজেরিয়া, আফ্রিকা, আফগানিস্তানে এর কার্যক্রম চলছে। আর এটার পুরো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টিম কাজ করে বাংলাদেশ থেকে।

এরপর ৭ মে, ২০১৮ তারিখে Software Engineer হিসাবে জয়েন করি দেশের অন্যতম স্বনামধন্য সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Brain Station 23 Limited এ। এরপর প্রোমোশন পেয়ে যথাক্রমে সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, লিড ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিকাল লিড ও স্টাফ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদবীতে দায়িত্ব পালন করি। ব্রেইন স্টেশনে চাকুরি করা অবস্থায় কাজ করেছি ইনসেপ্টা, অ্যারিস্টোফার্মা, পিকাবু, লাজ ফার্মার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে। এছাড়াও নরওয়ের কিছু ক্লায়েন্টের সাথে দুই-আড়াই বছর কাজ করেছি।

ব্রেইন স্টেশনে আমার সর্বশেষ ক্লায়েন্ট ছিল গ্রামীনফোন। ২০২২ সালের জুন মাস থেকে Brain Station 23 এর augmented resource হিসাবে Grameenphone এর হেডঅফিস GPHouse এ অফিস করেছি। কাজ করতাম MYGP Android App এ (৫০ মিলিয়ন ডাউনলোড)।

২০২৫ সালের মার্চ মাসে স্টাফ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে থাকা অবস্থায় ব্রেইন স্টেশনের ৭ বছরের জার্নি সমাপ্ত করে কাহফের সাথে যুক্ত হই।


আব্বুর চাকুরির সুবাদে আমার জীবনের প্রায় ২৭ বছর সরকারি কলোনীতে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। কলোনীর স্কুলে শিশু থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ি। এরপর হাফেজ হবার উদ্দেশ্যে মাদরাসায় চলে যাই। ৩ বছরের কিছু বেশি সময় চেষ্টা করে কুরআন হিফজ করতে ব্যর্থ হই। আমার জীবনের প্রথম ব্যর্থতার স্বাদ পাওয়া সম্ভবত এটাই। ১৩-১৪ বছর বয়সেই হয়ত বুঝে যাই মানুষের জীবনে ব্যর্থতার গ্লানি কতটা লজ্জার, কতটা কষ্টের!

নানান জায়গা ঘুরে মিরপুরের মুহাম্মদাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদরাসায় ভর্তি হই ক্লাস ফোরে। সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি প্রবল ঝোঁক তৈরি হয় এখান থেকেই। লেখালেখি করা, সাহিত্য আড্ডায় যোগ দেয়া, লিটল ম্যাগ, মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা ইত্যাদির সাথে জড়িত হই। স্বপ্ন দেখতে থাকি লেখক হবার। কবি হবার। যুক্ত হই একটি শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার একটা সাংস্কৃতিক গ্রুপে। সেখানে প্রায় ৬ বছর কাজ করি থিয়েটারে। মূলত মঞ্চ নাটক ও কবিতা আবৃত্তি করতাম। আর ছোট্ট পরিসরে কিছু শর্ট ফিল্ম নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট। মাদরাসা থেকে দাখিল (equivalent of SSC) পরীক্ষা দিয়ে পাশ করি ২০০৯ সালে। গোল্ডেন এ+ পেয়ে বাসায় আসলাম। আব্বু ধরে কপালে চুমু খেলেন। এখন চিন্তা করি, সেই শেষবার হয়ত তাদের আনন্দের কারণ হয়েছিলাম। এরপর শুধু ক্রমাগত ব্যর্থতা!

মাদরাসা শিক্ষার সমাপ্তি এখানেই! যদিও প্রায়ই ইচ্ছা করে প্রাইভেটে পড়ে মাদরাসার অন্যান্য ডিগ্রিগুলো নিই।

২০১১ সালে HSC দিলাম BCIC College থেকে। দেখতে দেখতে কেটে গেছিল সময়টা। তেমন কোন স্মরণীয় কিছু মনে পড়ে না কলেজ লাইফের। মাদরাসার ফ্রেন্ড মাসুম বিল্লাহ ছিল কলেজের একমাত্র ফ্রেন্ড। রীতিমত পানসে মানুষ, তাই কারো সাথে সাতে-পাঁচেও হয় না। আবার দহরম-মহরম বন্ধুত্বও হয় না। দ্বিতীয় চরম ব্যর্থতার স্বাদ পেলাম ফাইনালে জিপিএ ৫ না পেয়ে!

কোথাও চান্স না পেয়ে আবারো হোঁচট খেলাম। থিয়েটারে কাজ করার ধারাবাহিকতায় ইচ্ছা ছিল ফিল্ম মেকার হবার। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরিবার আর শুভাকাংক্ষীদের পরামর্শে B.Sc in Computer Science & Engineering এ ভর্তি হই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা সিটি কলেজে। নতুন জীবনের শুরু হয়েছিল প্রোগ্রামিং শেখার মাধ্যমে। আর ইতি টানি শিল্প-সংস্কৃতি বা নাট্য চর্চার জগতের। ২০১২ সালের পরে কালচারাল গ্রুপের সাথে কাজ করা আর হয়ে ওঠে নি। আলহামদুলিল্লাহ! এখন বুঝতে পারছি আল্লাহ ঐ অপ্রাপ্তিটার মধ্য দিয়ে আমার জীবনকে কতটা সুন্দর করেছেন। এরপর প্রোগ্রামিং আর প্রবলেম সলভিংকে ধ্যান জ্ঞান করা শুরু করি। প্রোগ্রামিং এর হাতেখড়ি হয়েছিল শাওন ভাইয়ার মাধ্যমে। তিনি না থাকলে হয়ত এই ব্লগ সাইটে লেখা হত না। আমার জীবনের সকল সাফল্য (যদি কিছু থাকে) তাহলে তার সকল ক্রেডিট এই মানুষটাকে দিলেও হয়ত কম হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে তাঁর দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করি।

অনার্স লাইফের শুরু থেকেই টুকটাক কোডিং করা শুরু করি। প্রথম কনটেস্টের অভিজ্ঞতা হয় কলেজ কর্তৃক আয়োজিত Intra Dept. Programming Contest 2012 এর মাধ্যমে। সেটাই ছিল জীবনের প্রথম প্রবলেম সাবমিট করার ঘটনা। দিনটি ছিল ২৪/০৬/২০১২। এরপর থেকে চেষ্টা চালাতে থাকি। তেমন কিছু করতে পারি নাই কখনোই। প্রোগ্রামিং কনটেস্ট এর ব্যাপারে একে অন্যকে সাহায্য করার জন্য একটা গ্রুপ খুলি ফেসবুকে। যার ফলে অনেক বিড়ম্বনার স্বীকার হই। অনেকেই ভাবে আমি না জানি কি! বিনয়ের সাথে বলি, আমি অর্গানাইজার। প্রোগ্রামিং শিখছি। এই যা…

থার্ড ইয়ারে এসে শাওন ভাইয়ার পরামর্শেই Android App Development শেখা শুরু করি। এন্ড্রয়েড এপ ডেভেলপমেন্ট এর হাতেখড়ি হয় শিক্ষক ডট কম এর জুলকারনাইন মাহমুদ ভাইয়ার টিউটোরিয়াল দেখে। ভাইয়ার কাছেও আজীবন কৃতজ্ঞ। এরপর BITM এর SEIP প্রোজেক্টের এন্ড্রয়েড কোর্স করি। তবে যা বুঝেছি, যেখানেই কোর্স করি না কেন আমার অক্ষর জ্ঞান থাকলে সব জায়গায় শব্দগঠন শিখিয়ে সর্বোচ্চ একটা বাক্যগঠন পর্যন্ত শেখাবে। এর বেশি কোন জায়গায় কোর্স করে শেখা সম্ভব না। বাক্যগঠন শিখে আমি কবিতা লিখব নাকি গল্প লিখব সেটা আমার স্কিলের উপর নির্ভর করে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে এই বাক্যগঠন পর্যন্ত শিখতে চাইলে কোন ট্রেনিং সেন্টারের সাহায্যের প্রয়োজন নাই। নেট ঘেটে নিজে নিজেই শেখা যায়।

এখন অনলাইন জাজে সলভ করা বা কনটেস্ট করার সুযোগ হয় না। আফসোস লাগে খুব। যদি টাকার চিন্তা না করতে হত আর আরেকটু ব্যাসিক ভাল থাকত তাহলে ভার্সিটির চার বছরই কনটেস্ট করতাম। তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় Megaminds Technologies নামের একটা টিম ছিল। কিছু সিনিয়র আর বন্ধু-বান্ধবরা মিলে টিম আকারে কাজ করতাম। ব্যাসিক সি প্রোগ্রামিং ও প্রোগ্রামিং কনটেস্টকে উদ্দেশ্য করে ডেটা স্ট্রাকচার-অ্যালগরিদমের কোর্সও চালু করেছিলাম আমরা। লোকাল মার্কেটের ফ্রিল্যান্সিং কাজ কর্ম আর কোর্সগুলো থেকে বেশ ভাল উপার্জন করলেও সেটা থেকে বের হয়ে আসি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। এই টিম ও অফিস ম্যানেজ করতে করতে বুঝতে পারছিলাম যে নিজেদের শেখার সুযোগ কম হচ্ছে। ছাত্র জীবনে টাকার পিছনে ছুটলে যা হয় আর কি! সেই চিন্তার জায়গা থেকেই মেগামাইন্ডসের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে পুরোপুরি পড়াশোনা ও সেলফ ডেভেলপমেন্টে মনোযোগ দিই। আল্লাহর কাছে সব সময় প্রার্থনা করতাম যেন পাশ করে বের হবার পর এক দিনও জব ছাড়া বসে থাকতে না হয়। আল্লাহ দোয়া কবুল করেছেন। ফাইনাল ইয়ারের সবগুলো পরীক্ষা শেষ হবার আগেই মনের মত একটা কোম্পানি INOVIO-তে জব হয়ে যায়। মেগামাইন্ডস লার্নিং এর ব্যানারে এখনো আমরা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট রিলেটেড কোর্স ও কন্টেন্ট ক্রিয়েট করার চেষ্টা করি। আমাদের কোর্সগুলো দেখতে পারেন এখান থেকে

২২ ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের CSE ডিপার্টমেন্টে M.Sc করার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় বসি। কেবল আল্লাহর রহমতে ২০তম পজিশন নিয়ে মেরিট লিস্টে জায়গা হয়। ২০১৯ এর শুরুর দিকে মাস্টার্স শেষ করি। অনার্স পাশ করে বের হতে পারব কিনা এমন আশংকাও ছিল। সেই ছেলে কিভাবে মাস্টার্সের সাহস করলাম আল্লাহ মালুম! মাস্টার্স করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। কী আর করার! জগতের বেশির ভাগ কাজই আমরা করি অনিচ্ছায়।

ঘুরে আসতে পারেন আমার গিটহাব রিপোজিটরি থেকে

মানুষ হিসেবে নিজের প্রতি অবজারভেশন হচ্ছে আমি খানিকটা আত্মকেন্দ্রীক। নিজের পড়াশোনা, লেখালেখি আর কাজকর্ম নিয়েই সময় কাটে। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কারো জন্যেই আমার খুব একটা সময় বরাদ্দ থাকে না। এমন কি নিজের আরাম-আয়েশ, ঘুরে বেড়ানো, একটা গল্পের বই পড়ে আনন্দ পাওয়া, মুভি দেখা, গান শোনা কোন কিছুই আর হয়ে ওঠে না। ২-১ জনের বেশি আমার বন্ধুও নাই। তাই আড্ডা দেয়াও হয় না। এমনও দিন আছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার কোন human being এর সাথে কথা হয় নাই। সামনা-সামনি বা ফোনেও! এক সময় হয়ত এর চরম মূল্য দিতে হবে।

খেতে ভালবাসি, ঘুমাতে ভালবাসি, সাইক্লিং করতে ভালবাসি, কাজ করতেও সম্ভবত ভালবাসি। কোন প্রোজেক্ট আসলে দিনের পর দিন বসে থেকে প্রোজেক্ট উঠাই। 

আমার ঘুম, খাওয়ার চেয়ে ক্লায়েন্টকে দেয়া ডেডলাইন বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। পড়তে ভালবাসি, পড়াতে ভালবাসি। কুরআন পড়া শেখানো দিয়ে আমার স্টুডেন্ট পড়ানোর শুরু। সেই ক্লাস ফোর-ফাইভের কথা। এখন আবার ইচ্ছা করছে কুরআন পড়া শিখাব। টাকা মূল শর্ত হবে না। শর্ত হবে ছাত্রের ডেডিকেশন। মেগামাইন্ডসে সি প্রোগ্রামিং এর তিনটা ব্যাচ পড়িয়েছি আমি সহ কয়েকজন মিলে। অ্যান্ড্রয়েডের উপর ৩ মাসের দুইটা আর ফ্লাটারের উপর একটা ব্যাচ পড়িয়েছি। পড়াতে যে আনন্দ পাই, অন্য কিছুতে তা পাই না।

লিখতে ভালোবাসি। যখন মন খারাপ থাকে তখন লেখা আসে। হতাশার সময় লেখা আসে। আমার ডায়েরির প্রতিটা লিখা একেকটা মন খারাপের ফলাফল। ব্লগের প্রায় প্রতিটা লিখাও একেকটা মন খারাপের কাব্য। প্রতিটা লিখা রেডি করতে অসম্ভব পরিমাণে পরিশ্রম হয়। মাথা ধরে আসে প্রচন্ড। এরপরেও প্রতিটা লেখা পোস্ট করার পর যে আনন্দ, যে তৃপ্তিটা পাই তার কোন তুলনা হয় না।

২০১৬ থেকে একটা বই লেখার চেষ্টা করছি। এখনো হয়ে উঠল না। এক সময় স্বপ্ন দেখতাম আমার কবিতার বই বেরুবে। এখন তা না হউক, অন্তত প্রোগ্রামিংয়ের বই হলেও হোক…

সবার দুয়া প্রার্থী।