পোস্টটি পড়া হয়েছে 21,542 বার
শিকড়ের সন্ধানে - ইহুদী ও খৃষ্টান জাতির ইতিহাস

শিকড়ের সন্ধানে [বই রিভিউ – ১৫]

Post updated on 13th November, 2022 at 08:37 pm

(আমাদেরকে) তাদের পথ (প্রদর্শন করো), যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ। তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট। (সূরা ফাতিহা, আয়াতঃ৭)

প্রতিদিন নামাজে অন্তত ১৭ বার আমরা আল্লাহর কাছে এই দুআ করি। আমরা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট জাতিদের মত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। হাদীস থেকে জানতে পারি অভিশপ্ত হচ্ছে ইহুদী আর পথভ্রষ্ট হচ্ছে খৃষ্টান জাতি। কী তাদের পরিচয়? কী তাদের ইতিহাস? তাদের স্বভাব-চরিত্র কেমন? কেনই বা তাদেরকে অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট বলা হলো? কুরআন-হাদীসের আলোকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর রয়েছে শিকড়ের সন্ধানে বইটিতে।

বইটিতে লেখিকা মুসলিম জাতির শিকড় বা আদি ইতিহাসের সন্ধান করেছেন। কিভাবে হযরত ইবরাহিম (আ) থেকে মুসলিম, ইহুদী ও খৃষ্টান জাতির সৃষ্টি হলো। দেখতে পাব অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের সাথে আমাদের কত চারিত্রিক মিল!

শিকড়ের সন্ধানেঃ সার-সংক্ষেপ

সকল নবী-রাসূলগণের দাওয়াতের মূল বিষয়বস্তু ছিল তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ। সকল নবী-রাসূলগণের পরিচয় ছিল মুসলিম। সে জায়গা থেকে কিভাবে মুসলিমের পরিবর্তে ইহুদী ও খৃষ্টানদের উৎপত্তি হলো?

বনি ইসরাঈলের থেকে এক পর্যায়ে ইহুদী ও (নাসারা) খৃষ্টান ধর্মের সৃষ্টি হয়। বনি ইসরাঈল কারা? আল্লাহ তায়ালা কুরআনের বহু স্থানে এই জাতির স্বভাব-প্রকৃতি ও পরিণতি সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কেন এবং কিভাবে এই জাতি অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টে পরিণত হলো। যদিও এক সময় তারা ছিল আমাদের পূর্ববর্তী নবীগণের অনুসারী তথা মুসলিম।

বনি ইসরাঈল থেকে শুরু করে আজকের মুসলিম। হাজার হাজার বছরের এই ইতিহাসের চুম্বক অংশ কুরআন-হাদীসের আলোকে এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে।

বনি ইসরাইলের পরিচয়

কুরআনের বড় একটি অংশ জুড়ে বনি ইসরাইল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা যদি বনি ইসরাইলের পরিচয় ও তাদের ইতিহাস মাথায় গেঁথে নিতে পারি। তাহলে অল্প সময়ে কুরআনের বড় একটা অংশ সম্পর্কে আমাদের কিছুটা জানা-শোনা হয়ে যাবে। তাদের ইতিহাস জানা থাকলে কুরআনের যে অংশগুলোতে তাদের কোনো ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো পড়ার সময় আমরা সহজে বুঝতে পারব। তাই ধারাবাহিক ভাবে বনি ইসরাইলের ইতিহাস জানাটা জরুরি।

কুরআন শুধুমাত্র একটি ইতিহাসের গ্রন্থ নয়। বরং মানবজাতির জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ইতিহাস এখানে আলোচিত হয়েছে। তাই সঙ্গত কারণেই ইতিহাস গ্রন্থের মত ধারাবাহিক বর্ণনাও এখানে নেই। এই বইটিতে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত ঘটনাগুলোকে ধারাবাহিক ভাবে সাজানো হয়েছে। বনি ইসরাইলের বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতা যেগুলো কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, সেগুলো সেই ক্রমানুসারে উল্লেখ করা হয়েছে। যেই ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা সম্পর্কে জানা যায় না সেগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে।

হযরত ইসমাইল (আ) ও হযরত ইসহাক (আ) এর মাধ্যমে হযরত ইবরাহিমের (আ) দুটি বংশ ধারা তৈরি হয়। মাঝে আরো অনেক নবী-রাসূলগণ থাকলেও মূলত ক্রমটা এরকমঃ

বনি ইসরাইল, ইহুদী ও খৃষ্টান জাতির ইতিহাস

আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইবরাহিম (আ) তাঁর প্রথম পুত্র হযরত ইসমাঈলকে (আ) ও বিবি হাজেরাকে মক্কায় রেখে আসেন। আর তাঁর স্ত্রী সারাহকে নিয়ে বসবাস করতে থাকেন শামে। যা বর্তমান সিরিয়া, জেরুজালেম সহ বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল।

মক্কায় পানি ও জনমানবের খোঁজে সাফা-মারওয়া পাহাড়ে হযরত হাজেরার ছুটোছুটির কথা আমরা সকলেই জানি। যা আজো হজ্জের সময় হাজী সাহেবগণ পালন করে থাকেন। আল্লাহ মরুভূমির মাঝে সৃষ্টি করেন জমজম কূপ। যা আজও বর্তমান। আল্লাহর সুনিপুণ পরিকল্পনা অনুযায়ী হযরত ইসমাইল (আ) ও তাঁর পরবর্তী বংশধরগণ বেড়ে উঠতে থাকেন মক্কায়। এই বংশধারায় জন্মগ্রহন করেন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)।

অপর দিকে হযরত ইবরাহিমের (আ) শাম অঞ্চলে বসবাস করতে থাকেন। তখন হযরত সারাহ এর গর্ভে জন্ম নেয় ইবরাহিম (আ) এর আরেক পুত্র হযরত ইসহাক (আ)। হযরত ইসহাকের (আ) পুত্র হযরত ইয়াকুব (আ)। যার আরেক নাম ইসরাইল। ইয়াকুব তথা ইসরাইল (আ) এর বংশধরদেরকে বনি ইসরাঈল বলা হয়। এই বংশধারাটি শাম অঞ্চলে বসবাস করতে থাকেন।

হযরত ইসলামইল (আ) এর পর মুহাম্মাদ (সা) এর আগ পর্যন্ত এই বংশধারায় আর কোনো নবী-রাসূল আসেন নি। কিন্তু হযরত ইসহাকের (আ) পর হযরত ঈসা (আ) পর্যন্ত অসংখ্য নবী-রাসূল এসেছেন। যাদের সঠিক সংখ্যা আমরা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে জানতে পারি না। হযরত ইয়াকুবের (আ) এর আরেক নাম ইসরাইল। এখান থেকে তাঁর বংশধরদেরকে বনি ইসরাইল বলা হয়ে থাকে। বনি ইসরাইলের মধ্য থেকে সর্বশেষ নবী হযরত ঈসা (আ)।

হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর ঠিক আগের নবী ছিলেন হযরত ঈসা (আ)। অর্থাৎ ঈসা (আ) ও মুহাম্মাদ (সা) এর মাঝে আর কোনো নবী-রাসূল আসেন নি।

বনি ইসরাইল কখন-কিভাবে শাম থেকে মিশরে গেল?

কুরআনে বনি ইসরাইল সম্পর্কে যেসব ঘটনা উল্লেখ রয়েছে তার সিংহভাগেরই কেন্দ্রীয় চরিত্র হযরত মূসা (আ) ও তার সময়কার লোকেরা। আর ঘটনাগুলো ছিল ফেরাউন ও মিশর কেন্দ্রিক।

উপরে আমরা বলে এসেছি ইবরাহিমের (আ) দুই ছেলের মাধ্যমে দুটি বংশধারা। হযরত ইসমাইলের (আ) বংশধরগণ বসবাস করতেন মক্কায় এবং বনি ইসরাইল বসবাস করত শাম দেশে। কিন্তু মূসা (আ) এর সাথে বনি ইসরাইলের ঘটনাগুলো ছিল মিশরের। বনি ইসরাইল তাহলে মিশরে গেল কিভাবে?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় সূরা ইউসুফে।

হযরত ইয়াকুব (যার আরেক নাম ইসরাইল) (আ) এর পুত্র হযরত ইউসুফ (আ)। ইউসুফ (আ)-কে তাঁর ভাইয়েরা হিংসার বশবর্তী হয়ে একটি কূপে ফেলে দেয়। সেই কূপ থেকে উদ্ধারকারীরা হযরত ইউসুফকে (আ) ক্রীতদাস হিসাবে বিকে দিয়েছিল মিশরে। আল্লাহর ইচ্ছায় এক পর্যায়ে হযরত ইউসুফ (আ) মিশরের মন্ত্রী হন। এরপর তার ভাইদের চক্রান্ত ফাঁস হয় এবং তিনি তার ভাইদেরকে ক্ষমা করে দেন। তখন তিনি তার পরিবারের সকল সদস্যদেরকে মিশরে নিয়ে আসেন।

এভাবে শাম থেকে বনি ইসরাইল মিশরে চলে আসলো। এই মিশরে থাকা বনি ইসরাইলের মাঝেই আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা (আ)-কে প্রেরণ করেন।

মিশরের সকল শাসক কিন্তু ফেরাউন নয়!

ইতিহাস থেকে জানা যায় হযরত ইউসুফের (আ) সময়ে, মিশরের শাসন ক্ষমতা ছিল অমিশরীয় হিক্সস জাতির হাতে। ১৭২০ খৃষ্টপূর্বে তারা শাসন ক্ষমতা দখল করে। এরপর ১৫৬০ খৃষ্টপূর্বে মিশরীয়রা হিক্সসদের দূর করে শাসন ক্ষমতা দখল করে। মিশরীয় কর্তৃক শাসনক্ষমতা পুনরুদ্ধারের এই সময়টি; প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে New Kingdom এর সূচনাকাল হিসাবে পরিচিত। New Kingdom এর আগ পর্যন্ত বনি ইসরাইল মিশরে মোটামুটি সম্মানের সাথেই সেখানে বসবাস করত। কিন্তু মিশরীয়রা ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে বনি ইসরাইলের প্রতি দাস-দাসীর মত আচরণ শুরু করে। এ সময়ে বনি ইসরাইল ছিল চরম নির্যাতিত ও অত্যাচারিত।

কুরআনে হযরত ইউসুফ (আ) মিশরের মন্ত্রী থাকার সময়ে, মিশরের রাজাদের সম্বোধন করার জন্য “মালিক” (King) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ফেরাউন শব্দটি ব্যবহার করা হয় নি। কিন্তু মূসা (আ) এর সময়কার রাজাকে সম্বোধন করা হয়েছে “ফিরআউন” বলে। এর কারণ কী?

আমাদের অনেকেরই ধারণা হচ্ছে মিশরের রাজা মানেই ফিরআউন। কিন্তু ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা! ১৫৬০ খৃষ্টপূর্বে মিশরীয়রা ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর অর্থাৎ New Kingdom এর সূচনাকালে মিশরীয় রাজারা ফিরআউন উপাধি গ্রহন করে, এর আগে নয়। আর কুরআনেও New Kingdom এর আগে ও পরের রাজাদের বুঝাতে “মালিক” ও “ফিরআউন” ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

কুরআন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব এবং এটি যে কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত থাকবে এটা বলাই বাহুল্য। অথচ বাইবেলে New Kingdom এর আগে ও পরের উভয় রাজাদেরকে ফেরাউন বলেই আখ্যা দেয়া হয়েছে। সহজেই বুঝা যায় বাইবেল আসলে মূল কিতাব নয়। মানুষ কর্তৃক মূল কিতাবের বিকৃতি।

এভাবে কুরআনের ভাষাগত অলৌকিকত্ব জেনে বুঝে আমরা যখন পড়ব। তখন ইনশাআল্লাহ আমাদের ইমান আরো বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

হযরত মূসা (আ) এর নবুয়্যতপ্রাপ্তি ও ফেরাউনকে দ্বীনের দাওয়াত

হযরত মূসা (আ) এর জন্মের আগে ফেরাউন কর্তৃক রাজ্যের সদ্য ভুমিষ্ঠ হওয়া সকল পুত্র শিশুকে হত্যা করার ঘটনা আমরা সবাই জানি। আমরা এটাও জানি যে আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত মূসা (আ) বেড়ে ওঠেন ফেরাউনেরই তত্ত্বাবধানে। তরুন বয়স, হযরত মূসা (আ) তখনও নবুয়্যত পান নি। এ সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে একজন মিশরীয়কে হত্যা তিনি করে ফেলেন। ঘটনা ফেরাউন পর্যন্ত পৌঁছলে সে মূসাকে (আ) হত্যার সিন্ধান্ত নেয়। তখন মূসা (আ) জীবন বাঁচাতে মিশর ছেড়ে মাদইয়ান অভিমুখে রওনা হন। মাদইয়ানে তিনি বিয়ে করেন ও ১০ বছর সেখানে অবস্থান করেন। এরপর তিনি আবার মিশরের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

মাদইয়ান থেকে মিশরে আসার পথে হযরত মূসা (আ) আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে নবুওয়্যতপ্রাপ্ত হন। আল্লাহ তাকে দুটি মু’জিযা দান করেন এবং ফেরাউনের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর আদেশ দেন। মূসা (আ) মিশরে এসে ফিরআউনকে মূলত দুটি প্রস্তাব দিয়েছিলেনঃ

  • ফিরআউনকে ইসলাম গ্রহন করতে হবে, নতুবা
  • বনি ইসরাইলকে মুক্ত করে দিয়ে মুসার সাথে ফিলিস্তিন যেতে দিতে হবে

আমরা আগেই জেনেছি New Kingdom এর পরে রাজারা যখন ফেরাউন উপাধি গ্রহন করেছে। তখন থেকে ভিনদেশীদের উপর অত্যাচার চলত। বনি ইসরাইলকে মূসা (আ) ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করে ফিলিস্তিন নিয়ে যেতে এসেছিলেন। যেন এত শত বছরের বন্দী দসা ও নির্যাতন থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে।

দ্বীনের দাওয়াতে ফেরাউনের প্রতিক্রিয়া

ফেরাউন এই প্রস্তাব গ্রহন করলো না। মূসা (আ) তখন আল্লাহর দান করা মু’জিযাগুলো দেখালেন। ফেরাউন সেগুলোকে জাদু বলে প্রত্যাখ্যান করলো। পরে রাজ্যের সকল জাদুকরদের সাথে খোলা মজলিশে মূসা (আ) যখন মু’জিযাগুলো দেখালেন তখন জাদুকররা সেগুলোকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিদর্শন হিসাবে সাক্ষ্য দিল এবং ইমান আনলো। ফেরাউন তখন জাদুকরদের হত্যা করে ফেলে। সূরা নামলের ১৪ নং আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি ফেরাউন ঠিকই সত্য চিহ্নিত করতে পেরেছিল। কিন্তু অহংকারবশত ঈমান আনেনি। আর অল্প কিছু লোক যারা মূসার (আ) উপর ঈমান এনেছিল তাদের উপর সে চালাচ্ছিল নানা অত্যাচার।

এ সময়ে ফেরাউনের অনুসারীদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নানা আজাব আসতে থাকে। যেমনঃ দুর্ভিক্ষ, তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ইত্যাদি। যখনই আযাব আসতো, তখনই তারা মূসার (আ) কাছে এসে দুআ করতে বলত। বলত বিপদ কেটে গেলে তারা ঈমান আনবে ও বনি ইসরাঈলকে চলে যেতে দিবে। কিন্তু আযাব সরিয়ে নেয়ার পর তারা সেই ওয়াদা রক্ষা করত না।

এ সময় বনি ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া ছিল বিস্ময়কর! মূসা (আ) তাদেরকে ফেরাউনের নির্যাতন থেকে রক্ষার্থে ফিলিস্তিন নিয়ে যেতে চাইছেন। কিন্তু তারা ছিল মূসার (আ) উপর বিরক্ত! তারা তাদের দাসত্বের জীবনে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে, এর থেকে বেরিয়ে আসতে সামান্য ত্যাগ স্বীকার করতেও রাজি ছিল না।

লেখিকা এই স্থানে বনি ইসরাইলদের সাথে আমাদের বর্তমান মুসলিমদের বিরাট একটি মিলের বিষয়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন। আমাদের বাস্তবতাও এমন যে আমরা আল্লাহর জমিনে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য নূন্যতম ত্যাগ স্বীকার করতেও রাজি না। আমাদের জীবন যতই দুর্বিষহ হয়ে উঠুক না কেন!

মূসার (আ) মিশর ত্যাগ, ফেরাউনের পতন

এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসাকে (আ) আদেশ দিলেন বনি ইসরাইলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ার। তিনি রাতের অন্ধকারে ফিলিস্তিনের উদ্দেশ্যে মিশর ত্যাগ করলেন। ফেরাউনও টের পেয়ে বনি ইসরাইলের পিছু নিলো। মূসা (আ) লোহিত সাগরের খুব কাছাকাছি চলে আসলেন। সামনে সাগর, পিছনে ফেরাউনের বাহিনি। বনি ইসরাইল স্বভাবসুলভ ভাবে সকল দোষ মূসার (আ) উপর চাপিয়ে দিয়ে ক্ষ্যান্ত হলো। আল্লাহ মূসাকে (আ) লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত করতে বললেন। ফলে সাগরের বুক চিরে রচিত হলো সুগম্য পথ। মূসা (আ) বনি ইসরাইলকে নিয়ে সাগর পার হলেন। ফেরাউন তখন তার বাহিনি নিয়ে মাঝ দরিয়ায়। এই অবস্থায় রাস্তা আবার মিলিয়ে গেল। ফেরাউন তার দলবল সহ পানিতে ডুবে মারা পড়লো। মজার বিষয় হচ্ছে ফেরাউন এই শেষ সময়ে এসে ঈমান এনেছিল। কিন্তু তার এই তওবা গৃহিত হয় নি।

লোগিত সাগর পার হয়ে মূসা (আ) এক লোকালয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এর অধিবাসীরা ছিল মূর্তিপূজক। তাদের দেখে বনি ইসরাইল মূসার (আ) কাছে একটি মূর্তি নির্মান করে দেয়ার আবেদন জানালো। যেন তারা সেটাকে পূজা করতে পারে! চিন্তা করা যায়? যারা নিজের চোখে আল্লাহর অনুগ্রহ দেখলো! লোহিত সাগরের মাঝের কুদরতী রাস্তা দিয়ে সাগর পার হলো। তারা এখন মূর্তি পূজা করতে চাইলো! মূসা (আ) জবাবে শুধু বললেন “তোমরা আসলে একটি মূর্খ সম্প্রদায়”! (সূরা আরাফ, ১৩৮)

তারা সুদীর্ঘ কাজ অমুসলিমদের শাসনে থেকে নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছিল। শিরকের চর্চা দেখতে দেখতে সেটা গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। এজন্য অনেক স্কলার বলেন, ইসলামের গভীর জ্ঞান ও সুদৃঢ় ঈমান না থাকলে অমুসলিম দেশে বসবাস করার জন্য যাওয়া উচিত নয়। একটা পাপ বারবার দেখে দেখতে একটা সময় সেটা সহজ ও স্বাভাবিক মনে হয়। নাটক-সিনেমায় হারাম রিলেশন দেখতে দেখতে এখন এটা আমাদের সমাজে আর হারাম হিসাবে গণ্যই করা হয় না। বেপর্দা ও নগ্নতাকে এখন আধুনিক হওয়ার নিদর্শন ধরা হয়। বিড়ি-সিগারেট এখন কোনো দোষণীয় বিষয়ের মধ্যেই পড়ে না। শিরক ও বিদআতের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান এখন এতটাই সহনীয় যে এগুলোকে গায়ে লাগানোর মত বিষয়ই মনে হয় না। তাই আমরা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” মুখে পড়ি, আবার একই সাথে মাজারে গিয়ে কপাল ঠুকি। বা মাজারে শায়িত পীরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।

যাই হোক, বনি ইসরাইলকে সাথে নিয়ে মূসা (আ) যখন জেরুজালেমের কাছাকাছি পৌঁছলেন। তখন তিনি তাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে বললেন এবং পেছন থেকে পালিয়ে যেতে নিষেধ করলেন। তিনি আশ্বাস দিলেন যে, এতে করে জেরুজালেম তাদের হস্তগত হবে। কিন্তু বনি ইসরাইল তার স্বভাবসুলভ যে উত্তর দিল তার ভাবার্থ এরকমঃ “সেখানে অনেক শক্তিশালী জাতি বাস করে। তারা সেখান থেকে বের হয়ে গেলেই আমরা সেখানে যাব। আপনি আর আপনার রব উভয়ে গিয়ে যুদ্ধ করুন। আমরা এখানে বসলাম”! (সূরা মায়িদা, ২৬)

এহেন জবাবে আল্লাহ বনি ইসরাইলের জেরুজালেম প্রবেশ, ৪০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে দিলেন। আর বললেন এই সময়ে তারা মরুভূমিতে উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াবে।

বনি ইসরাইলের নির্বাসনের ৪০ বছর

আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এই শাস্তি দিলেও মরুভূমিতে জীবন ধারনের জন্য যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করলেন। তাদেরকে ৩টি বিশেষ নেয়ামত দান করলেন।

  • মরুভূমির তপ্ত রোদের মাঝে ছায়া
  • মান্না ও সালওয়া নামক বেহেশতী খাবার
  • পানি

এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর বনি ইসরাইলের কাছে এই জান্নাতি খাবার একঘেয়ে লাগতে শুরু করলো। তখন তারা মূসাকে (আ) দুআ করতে বললো তরকারি, কাঁকড়ি, গম, মসুরি, পেঁয়াজ ইত্যাদি ফসল যেন তারা চাষাবাদ করে খেতে পারে। মূসা (আ) বললেন তোমরা কি এরকম ভাল জিনিসের পরিবর্তে নিম্নমানের জিনিসের আবেদন করছো? আসলে তারা খেতে চাইছিল সেই মিশরীয় খাবার। যেগুলো খেয়ে তারা অভ্যস্ত ছিল। ব্যাপারটা অনেকটা এমনঃ দীর্ঘদিন জেল খেটে মুক্তির পর আবার জেলের খাবার মিস করতে শুরু করা। ভাল খাবারের পরিবর্তে জেলের খাবারের আবেদন করা।

মূসা (আ) ও আল্লাহর মাঝে কথোপকথন

মরুভূমিতে বনি ইসরাইলের জৈবিক সকল প্রয়োজনই আল্লাহ মিটিয়ে দিচ্ছিলেন। এখন দরকার ছিল তাদের আত্মিক পরিশুদ্ধি। যেন তারা পরিশুদ্ধ জাতি হিসাবে জেরুজালেমে গিয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তাই আল্লাহ মূসা (আ)-কে ডাকলেন তুর পাহাড়ের উপত্যকায়। সেখানে আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন এবং তাওরাত নাজিল করবেন। মূসা (আ) ৩০ দিনের জন্য তুর পাহাড়ে গেলেন। বনি ইসরাইলের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন তাঁর বড় ভাই হযরত হারুন (আ)-কে। পরে আল্লাহ এই সময়কাল বাড়িয়ে ৪০ দিন করে দেন।

বনি ইসরাইলের শিরকে লিপ্ত হওয়া

মূসা (আ) ৩০ দিনের কথা বলে তুর পাহাড়ে গিয়েছিলেন। পরে যে এটা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ দিন হয়েছে সেটা বনি ইসরাইল জানত না। এই সময়ে সামেরি গোত্রের এক লোক স্বর্ণ দিয়ে একটি বাছুর বানিয়ে জ্বীনের সাহায্য নিয়ে সেটার মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করে। আর প্রচার করতে থাকে এটাই তাদের ইলাহা। বনি ইসরাইল এই বাছুরের পূজা অর্চনা শুরু করে। হযরত হারুন (আ) তাদেরকে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করে নি এবং তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মিশরীয়রা গরু পূজা করত। সেটা তারা দেখে দেখে অভ্যস্ত ছিল। সেই জায়গা থেকে তারা বাছুরের পূজা শুরু করেছিল।

পরে মূসা (আ) ফিরে আসার পর বাছুর পূজার শুরু করেছে যে লোক, তাকে নির্বাসনে দেন। আর যারা এর সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

বনি ইসরাইল কর্তৃক আল্লাহকে দেখতে চাওয়া

মূসা (আ) ঠিক করলেন বনি ইসরাইল থেকে বাছাই করা সেরা ৭০ জন লোক নিয়ে তুর পাহাড়ে যাবেন। তিনি আল্লাহর সাথে যখন কথা বলছিলেন তখন এই লোকজন বলতে লাগলো যে তারা আল্লাহকে সরাসরি না দেখতে পেলে মূসাকে (আ) বিশ্বাস করবে না। তখন সাথে সাথে প্রচন্ড বজ্রপাত হলো আর তারা সকলেই মারা গেল। মূসা (আ) তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাদেরকে পুনরায় জীবিত করেন। পুনরায় জীবন পাওয়ার পরও তারা আল্লাহর বিধিবিধান মাতনে গরিমসি করতে লাগলো। তারা দেখতে চাচ্ছিল যে বিধানগুলোর কোনটা সহজ আর কোনটা কঠিন। এমতাবস্থায় ফেরেশতারা তুর পাহাড়কে তাদের উপর এমন ভাবে তুলে ধরলেন যেন তা এক্ষুণি ধসে পড়বে। তখন তারা আল্লাহর বিধানগুলো মানতে বাধ্য হলো।

উপরের এই সকল ঘটনাগুলো হলো তাদের ৪০ বছরের নির্বাসিত জীবনের ধারাবাহিক বর্ণনা। আরো অন্যান্য ঘটনা রয়েছে যেগুলোর ধারাবাহিকতা জানা যায় না। যেমন বনি ইসরাইল কর্তৃক মূসার (আ) উপর অসুস্থতার অপবাদ, বাকারা বা গরু জবাই সংক্রান্ত ঘটনা, শনিবার-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্যের ঘটনা ইত্যাদি।

বনি ইসরাইলের জেরুজালেম প্রবেশ

হযরত মূসার (আ) ইন্তেকাল পরবর্তী সময়। অনেক পরিবর্তন এসেছে। আল্লাহর দেয়া নিষেধাজ্ঞার ৪০ বছর শেষ হলো। এরচেয়েও বড় একটা পরিবর্তন হয়েছে। সেটা কি? একটা প্রজন্ম বদলে গেছে। মূসা (আ) এর সাথে মিশর থেকে যারা এসেছিল তাদের অধিকাংশই এ সময়ের মাঝে মৃত্যুবরণ করেছে। এরপর মরুভূমির শুষ্ক ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় বেড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ নতুন এক প্রজন্ম। যারা দাসত্বের মনোভাব থেকে মুক্ত।

এই নতুন প্রজন্ম নিয়ে ইউশা ইবনু নুনের নেতৃত্বে বনি ইসরাইল জেরুজালেম প্রবেশে সক্ষম হয়। আল্লাহর নির্দেশ ছিল ইস্তেগফার করতে করতে সিজদায় অবনত হয়ে জেরুজালেমে প্রবেশ করার। কিন্তু তাদের মধ্য অল্প সংখ্যক ব্যতিত বেশির ভাগই ছিল উদ্ধত। আসলে বনি ইসরাইলের ইতিহাস দেখতে দেখা যাবে ক্রমাগত সীমা লঙ্ঘন ও ক্ষমাপ্রাপ্তির পুনরাবৃত্তি। তাদের কাছে অসংখ্য নবী এসেছেন। আর তারা অসংখ্য নবীকে হত্যা করেছে।

ইউশা ইবনে নুন মরুভূমি থেকে আসার সময় সাথে করে কিছু মূল্যবান জিনিস নিয়ে এসেছিলেন। তার মাঝে ছিল হযরত মূসা (আ) ও পূর্ববর্তী নবীদের পরিত্যক্ত বরকতময় কিছু বস্তুসামগ্রী। সেগুলো তিনি একটি সিন্দুকে সংরক্ষণ করে রাখেন। বনি ইসরাইলের ইতিহাসে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যা Ark of the Covenant নামে পরিচিত।

বনি ইসরাইলের পদস্খলন

জেরুজালেমে প্রবেশের পর বেশ কিছু বছর বনি ইসরাইল আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করেছিল। এরপর আস্তে আস্তে আবার তাদের পদস্খলন ঘটতে থাকে। তারা নিজেদের মাঝে অন্তর্দ্বন্দ্ব-কোন্দলে বিভক্ত ছিল। করত তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার। তখন আল্লাহ বহিঃশত্রুকে তাদের উপর শক্তিশালী করে দিলেন। আশেপাশের গোত্র এসে বনি ইসরাইলকে পবিত্র ভূমি থেকে তাড়িয়ে দিল। তারা ইরাক, শাম, তুরস্ক ইত্যাদি নিকটবর্তী স্থানগুলোতে প্রাণভয়ে পালাতে লাগলো।

এভাবে দিকভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে এক সময় তারা বুঝতে পারলো, একজন আল্লাহ প্রেরিত বাদশাহ বা নেতার অধিনে যুদ্ধ করা দরকার। নইলে এ অবস্থা থেকে রেহাই মিলবে না। তখন তারা তাদের কাছে প্রেরিত ঐ সময়ের নবীর (আ) কাছে গিয়ে এরকম একজন বাদশাহ বা নেতার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করতে বলল। নবী (আ) বললেন তোমরা এখন যুদ্ধ করতে চাইছো, কিন্তু যুদ্ধের সময় যদি আগের মত তোমরা পালিয়ে যাও? তারা নিশ্চয়তা দিল যুদ্ধ করার। আল্লাহ তখন বাদশাহ তালুতকে পাঠালেন তাদের নেতা হিসাবে। তারা তাঁকে পছন্দ করলো না। কিন্তু বাধ্য হয়ে তার নেতৃত্বে যুদ্ধ করলো, তাও খুব অল্প সংখ্যক লোক। আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করলেন। তারা আবার জেরুজালেমে ফেরত আসলো। তালুতের মৃত্যুর পর হযরত দাঊদ (আ) পরবর্তী বাদশাহ নিযুক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে বনি ইসরাইলের স্বর্ণযুগ শুরু হয়।

বনি ইসরাইলের স্বর্ণযুগ

তালুতের মৃত্যুর পর হযরত দাঊদ (আ) প্রায় ৪০ বছর শাসন করেন। এরপর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন হযরত সুলাইমান (আ)। যাকে আল্লাহ দান করেছিলেন অর্ধেক পৃথিবীর রাজত্ব। জ্বীন, বাতাস ও পশুপাখির উপরও আল্লাহ তাকে নিয়ন্ত্রন প্রদান করেন। সুলাইমান (আ) এর শাসনামলের বিভিন্ন ঘটনা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বইটিতে বর্ণিত হয়েছে। স্ববিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে রাণী বিলকিসের ঘটনা। সে সংক্রান্ত বিভিন্ন শিক্ষা। উল্লেখ আছে সুলাইমানের (আ) ন্যায় বিচারের ঘটনা ইত্যাদি। একটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে সুলাইমান (আ) এর সাথে জ্বীনজাতির সম্পর্কের কথা। জ্বীনদের বিষয়ে আমাদের আকিদা ও সমসাময়িক বেশ কিছু বিষয়ে সতর্কতা। আলোচনা হয়েছে জ্বীন জাতির সাহায্যে হযরত সুলাইমান (আ) কিভাবে বাইতুল মাকদিস নির্মান করেছেন সে বিষয়ে এবং সুলাইমান (আ) এর ইন্তেকাল।

বনি ইসরাইল থেকে ইহুদী হওয়ার ইতিহাস

হযরত সুলাইমান (আ) এর ইন্তেকালের পর তাঁর এই বিশাল রাজত্ব দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। উত্তর অংশের নাম ছিল ইসরাইল আর দক্ষিণ অংশের নাম ছিল জুডাহ (Judah). যা আরবিতে ইয়াহুদ। আমরা আগেই জেনেছি হযরত ইসহাকের (আ) ছেলে হযরত ইয়াকুবের (আ) আরেক নাম ছিল ইসরাইল। আর জুডাহ বা ইয়াহুদ ছিলেন ইয়াকুব (আ) এর ১২ জন সন্তানের একজন। বিভক্ত হওয়া বনি ইসরাইল আস্তে আস্তে শিরক ও মূর্তিপূজায় নিমজ্জিত হলো এবং তাদের নিকট আগত নবীকে হত্যা করে। আল্লাহ তাদের উপর নানা আযাব-গজব পাঠান। এগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা আলোচ্য বইটিতে রয়েছে।

খৃষ্টপূর্ব ৫৮৭ সালে ব্যাবিলনীয় রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার জুডাহ আক্রমন করে। সে জেরুজালেমকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। নির্বিচারে বনি ইসরাইলের লোকদের হত্যা করে। জীবিতদেরকে দাস হিসাবে ব্যাবিলনে ধরে নিয়ে যায়। অতি অল্প সংখ্যক লোক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ সময়ে সুলাইমানের (আ) নির্মিত মসজিদটি ভেঙে দেয়া হয়। বনি ইসরাইলের অমূল্য সম্পদ বলে বিবেচিত Ark of the Covenant তাদের হাতছাড়া হয়। 

৫৩৯ খৃষ্টপূর্বে পারসিয়ান রাজা সাইরাস ব্যাবিলন দখল করে নেয়। সে ইহুদিদেরকে জেরুজালেম ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেয়। তারা ফিরে গিয়ে Solom’n Temple এর জায়গাতেই আরেকটি স্থাপনা নির্মান করে। যা ইতিহাসে 2nd Temple নামে পরিচিত।

৫৮৭ খৃষ্টপূর্বে দাস হিসাবে বনি ইসরাইল বা জুডাহ অধিবাসীদেরকে নির্বাসিত করার পরবর্তী সময়ে পরিচিয়ের ক্ষেত্রে তারা নিজেদেরকে “ইহুদী” বা Jews বলে আখ্যা দেয়া শুরু করে। এর আগ পর্যন্ত তারা নিজেদেরকে বনি ইসরাইল বলে পরিচয় দিত। যার অর্থ অনেকটা দাঁড়ায় আল্লাহর দাস। কিন্তু পরবর্তীতে যখন তারা ইয়াহুদী নাম ধারন করলো, সেখানে ধর্মীয় পরিচয়ের স্থানে জায়গা করে নিল জাতিগত বা গোত্রীয় পরিচয়।

কুরআনে “ইহুদী” শব্দটি যত জায়গায় এসেছে, সেগুলো মদিনার ইহুদী অথবা “ইহুদী-নাসারা” এভাবে একসাথে ব্যবহার হয়েছে। কখনোই মূসা (আ) বা দাউদ (আ) এর সময়কার বনি ইসরাইলকে ইহুদী নামে সম্বোধন করা হয় নি। বরং তখনকার ঘটনা বর্ণনা করার সময় তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে বনি ইসরাইল শব্দ দ্বারা। সুবহানাল্লাহ! কুরআন এই ঐতিহাসিক পটভূমির সূক্ষ্ম পরিবর্তন ধারণ করেছে অবিশ্বাস্য নির্ভুলতায়!

বনি ইসরাইলের মত ধর্মীয় পরিচয় ত্যাগ করে এভাবে তারা ইহুদী নামক গোত্র বা জাতির পরিচয়ে পরিচিত হলো। এরপর নিজেদের মনগড়া বিভিন্ন মতামত প্রতিষ্ঠা শুরু করলো। নিজেদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ফাঁপা বুলি আওড়াতে শুরু করলো। এটা এখন আর ধর্মীয় বিশ্বাসের নাম নয়। ইহুদীদের বিশ্বাস হচ্ছে- ইহুদী হওয়া বা না হওয়া কোনো বিশ্বাস বা কাজের উপর নির্ভর করে না। ইহুদীদের রীতিনীতি ও বিশ্বাস লালন করলে কাউকে ইহুদী বলা হবে না। তাদের মতে ইহুদী সেই যে কিনা ইহুদী মায়ের সন্তান। এটি তাদের কাছে ধর্মের মত নয় বরং নাগরিকত্বের মত। তাদের দাবীকৃত সকল শ্রেষ্ঠত্ব কর্মের ভিত্তিতে নয়, বরং গায়ের জোরে দাবী করা পৈত্রিক সম্পত্তি যেন!

ইহুদি এবং খৃষ্টানঃ এক উম্মাহর বিভাজনের পটভূমি

হযরত ঈসা (আ) এর জন্মের কয়েকশ বছর আগে জুডাহ রাজ্য রোমানদের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। হযরত ঈসার (আ) আগমনের পর ইহুদীদের থেকে একটি শাখা বের হয়ে খৃষ্টানে পরিণয় হয়। শিকড়ের সন্ধানে বইটিতে ঈসা (আ) এর মাতা হযরত মারিয়াম (আ) এর জন্মের আগের থেকে নিয়ে ঈসা (আ) এর জন্ম ও আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন ঘটনা ধারাবাহিক ভাবে কুরআন-হাদীসের বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

হযরত মারইয়াম (আ) যখন কোনো পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত ঈসা (আ)-কে জন্ম দিলেন। তখন সদ্য ভূমিষ্ঠ ঈসা (আ) আল্লাহর তাওহিদের বাণী এবং তাঁর নবী হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেন। ইহুদীরা এই মু’জিযা দেখেও ঈসার (আ) প্রতি ঈমান আনে নি। শুধুমাত্র তাদের কর্তৃত্ব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি খর্ব হবে এই আশংকায়। তারা হযরত মারইয়াম (আ) এর বিরুদ্ধে কুৎসা ও অপবাদ দিতে থাকলো।

ইহুদী কর্তৃক ঈসাকে (আ) হত্যার ষড়যন্ত্র

হযরত ঈসা (আ) নবী হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন বনি ইসরাইলের মধ্য থেকে। বনি ইসরাইলের মাঝে অসংখ্য নবী এসেছিলেন। হযরত ঈসা (আ) ছিলেন বনি ইসরাইলের সর্বশেষ নবী। আল্লাহর পাঠানো কিতাবের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ প্রতিটি কিতাবেই তার আগের কিতাবের সত্যয়ন করা হয় এবং পরের কিতাব বা পরবর্তী নবী সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হয়। ইহুদীদের কাছে সংরক্ষিত তাওরাতেও হযরত ঈসার (আ) আগমনের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলো।

ইহুদীদের এই হত্যার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। আল্লাহ হযরত ঈসাকে (আ) জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নেন। ইহুদীদের বিশ্বাস হলো তারা ঈসাকে (আ) হত্যা করতে পেরেছে। অপরদিকে হযরত ঈসার (আ) অল্প কিছু অনুসারী ছিলেন, যারা বিশ্বাস করতেন ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করতে পারে নি। এই বিশ্বাসের জায়গা থেকে ইহুদীদের থেকে বের হয়ে খৃষ্টান ধর্মের সৃষ্টি হয়।

এরপর ইহুদীদের উপর নেমে আসে মহা বিপর্যয়। কুরআনে এটাকে দ্বিতীয় বিপর্যয় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম বিপর্যয় ছিল ব্যাবিলনীয়দের দ্বারা জুডাহ শহর ধ্বংস হওয়ার ঘটনা। দ্বিতীয় বিপর্যয়ের আগে ইহুদীরা রোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তখন ৬৬ খৃষ্টাব্দ অর্থাৎ ঈসার (আ) জন্মের ৬৬ বছর পর। বিদ্রোহ দমন করতে রোমান শাসক Titas জেরুজালেম আসে এবং একে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। কথিত আছে এ আক্রমনের পরে কোথাও দুইটা ইট একসাথে ছিল না। সে সময় ইহুদীরা জেরুজালেম থেকে বিতারিত হয় এবং তখন থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তারা ছন্নছাড়া ভাবে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়িয়েছে।

এ সময়ে তারা যেখানেই গিয়েছে সেখান থেকেই বিতাড়িত হয়েছে। তারা যেখানেই যেত সেখানেই সুদের কারবার করত। ফলে সেসব অঞ্চলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসত। তখন স্থানীয়রা এই অভিশপ্ত ইহুদীদেরকে সেসব জায়গা থেকে তাড়িয়ে দিত।

হযরত ঈসার (আ) শিক্ষা থেকে খৃষ্টানদের পদস্খলন

বর্তমান বাইবেল যে খৃষ্টানদের নিজস্ব মতামত এবং এতে আল্লাহর বাণী যে খুব অল্প পরিমাণে বিদ্যমান। সেটা লেখিকা দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। খৃষ্ট ধর্মের বিবর্তনের বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। খৃষ্ট ধর্মের বিবর্তনের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের নাম হচ্ছে পৌল (Paul)। আধুনিক খৃষ্টধর্মের জনক বলা হয় তাকে। যদিও সে কখনো ঈসাকে (আ) দেখে নি। এমন কি ঈসার (আ) জীবদ্দশায় পৌল ছিল তাঁর ঘোর বিরোধী। ইহুদীদের দ্বারা ঈসার (আ) কথিত ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পর পৌল হযরত ঈসার (আ) শিষ্যদের ধরে এনে হত্যা করার জন্য রওনা হয়েছিল। তার ভাষ্যমতে পথিমধ্যে ঈসা (আ) তার সাথে দেখা দিয়েছিলেন। আলোর ঝলকানিতে সে প্রায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিন দিন পর তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার পর সে ঈসার (আ) ভক্ত হয়ে যায়।

এরপর সে তার উর্বর (!) মস্তিষ্কপ্রসূত বিভিন্ন তত্ত্ব প্রচার করা শুরু করে। সে ঈসার (আ) বাণী প্রচার ও পালনের পরিবর্তে মূল ধর্মটাই বদলে ফেলে। সে বিভিন্ন অপব্যাখ্যা করে প্রচার করতে শুরু করলো ঈসা (আ) হচ্ছেন আল্লাহর পুত্র (নাউযুবিল্লাহ)। এরকম বিভিন্ন মনগড়া ও অদ্ভুত ধর্মবিশ্বাস প্রচার করে সে খৃষ্টান ধর্মের বিকৃতি সাধন করলো। খৃষ্টানদের বর্তমান ধর্মগুরুরাও স্বীকার করে খৃষ্টানদের ত্রিত্ববাদ (Trinity) বাইবেলে নাই। এটা বিবর্তিত মতবাদ। ঈসার (আ) জন্মের প্রায় ২০০ বছর পর প্রথমবারের মত এই মতবাদের সুসংগঠিত রূপরেখা দেয় Tertullian. পরবর্তী সময়ে খৃষ্টানদের বিভিন্ন মতামত ও গ্রুপ সামনে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে ৩২৫ সালে Council of Nicea খৃষ্টধর্মের বিভিন্ন নীতি ও বিশ্বাসকে আরো সংগঠিত করে ও একটি স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে প্রকাশ করে।

লেখিকা এই পুরো বিষয়টি নিয়ে পর্যাপ্ত রেফারেন্স সহ লম্বা আলোচনা করেছেন। খন্ডন করেছেন খৃষ্টবাদের বিভিন্ন অসাড় বিশ্বাসকে। যা বইটি পড়লে বিস্তারিত জানা যাবে।

মুসলিম, ইহুদি এবং খৃষ্টানঃ এক উম্মাহর ৩ ভাগে বিভক্ত হওয়া

ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর আগমনের কথা উল্লেখ ছিল। এমনটাও বলা হয় ইহুদীরা মদিনায় গিয়ে বসবাস শুরু করেছিল নবীজির (সা) আগমনের অপেক্ষায়। তারা আশা করেছিল সর্বশেষ নবীর আগমন ঘটবে তাদেরই অর্থাৎ বনি ইসরাইলের মধ্য থেকে। কিন্তু নবীজির (সা) জন্ম হয়েছিল ইবরাহিম (আ) এর প্রথম পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ) এর বংশধারায়। আর বনি ইসরাইলরা হচ্ছে ইবরাহিমের (আ) দ্বিতীয় পুত্র ইসহাকের বংশধর।

ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে শেষনবীর যেসকল আলামত ছিল, সেগুলোর সবগুলো মিলে যাবার পরও তারা নবীজিকে (সা) গ্রহন করে নি। শুধুমাত্র তাদের জাতিগত অহমিকার জন্য।

শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর আগমনের মাধ্যমে আল্লাহর জমীনে আবারও বিশুদ্ধ তাওহিদের ঘোষণা উচ্চারিত হতে শুরু করলো। এখান থেকে উম্মাহ বিভাজিত হলো তিন ভাগে। মুসলিম, ইহুদী ও খৃষ্টান। এই তিনটি ধর্মের বিশ্বাস ও বিশ্বাসগুলোর তুলনামূলক পার্থক্য এবং বিভিন্ন মতবাদ লেখিকা সংক্ষেপে বইটিতে তুলে ধরেছেন।

৩টি জাতি পরিণত হবে একটি জাতিতে!

কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে ঈসা (আ) আগমন করবেন। মাহদি আসবেন। ঈসা (আ) দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তখন খৃষ্টান ও ইহুদী জাতি তাদের ভুল বুঝতে পারবে। তারা ঈমান এনে মুসলিম হবে। সূরা নিসার ১৫৯ নাম্বার আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি যে, আহলে কিতাব তথা ইহুদী ও খৃষ্টানদের প্রত্যেকেই কিয়ামতের পূর্বে ঈসা (আ) এর মৃত্যুর পূর্বে ঈমান আনবে। তখন পৃথিবীতে মুসলিম ব্যতীত অন্য কোনো জাতির অস্তিত্ব থাকবে না। বিশ্বব্যাপী তখন প্রতিষ্ঠিত হবে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন, ইসলাম। এরপর মানুষ আস্তে আস্তে আবারও পথভ্রষ্ট হবে। আবারো মানুষ মূর্তিপূজার মত শিরকে লিপ্ত হবে। এরপর এক সময় সংঘটিত হবে কিয়ামত।

বইটি সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অভিমত

বইটি আমার কাছে মনে হয়েছে একটি সূচীপত্রের মত। বনি ইসরাইল, ইহুদী, খৃষ্টান ও মুসলিম জাতির সামগ্রিক ইতিহাসের একটি সূচীপত্র। সাম্প্রতিক কালে আমার পঠিত বইগুলোর মধ্যে এত তথ্যবহুল আর দলিল নির্ভর অন্য কোনো বইয়ের নাম মনে পড়ছে না। বেশ কিছুদিন আগে পড়েছিলাম মাওলানা আবদুর রহীমের হাদীস সংকলনের ইতিহাস বইটি। সেটিও ছিল এরকম রেফারেন্স সমৃদ্ধ একটি বই।

শিকড়ের সন্ধানে বইটি অনেকটি রেফারেন্স টুকে রাখা নোটবুকের মত। দুই বারের মত বইটি পড়া হয়েছে। ইচ্ছা আছে বইটি আবারও পড়ব একে সূচীপত্র বা নোটবুকের মত করে। বইটিতে বনি ইসরাইল, ইহুদী ও খৃষ্টানদের ইতিহাস বর্ণিত আছে। যার ভিত্তি মূলত কুরআন ও হাদীস। ইচ্ছা আছে বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় বর্ণিত কুরআনের আয়াতগুলো নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাব থেকে অধ্যয়ন করব। প্রতি পৃষ্ঠায় যেই রেফারেন্সগুলো আছে সেগুলো মূল সোর্স থেকে অধ্যয়ন করা গেলে আরো বিস্তারিত ও বিস্তৃত ভাবে জানার সুযোগ হবে। সেই অর্থে এই বইটিকে রেফারেন্স লিখার নোটবুক বা সূচীপত্র বলেছি।

এত ছোট পরিসরে এত তথ্যবহুল একটি বই আপনাকে মুগ্ধ করবে ইনশাআল্লাহ। বইটি পড়তে পড়তে যখন শেষ হয়ে যাবে, মনে হবে আরো বড় বই হলো না কেন? লেখিকাকে কী পরিমাণ পড়াশোনা করতে হয়েছে বইটি লিখার জন্য তার প্রমাণ বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায় রয়েছে। আজকের মুসলিম সমাজের অবস্থা ও আমাদের দন্যতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি অধ্যায়ে অধ্যায়ে। বইটি পড়লে আল্লাহ চাহে তো আরেকটু ভালো মুসলিম হওয়ার আশা জাগবে।

আল্লাহ আমাদের সকলকে অভিশপ্ত ইহুদী এবং পথভ্রষ্ট খৃষ্টানদের মত হওয়া থেকে হেফাজত করুন। তাদের অনুসরণ থেকে বিরত থেকে নিজেদের স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠার তাওফিক দান করুন। আমীন।

বইটি সম্পর্কে কিছু তথ্য

নামঃ শিকড়ের সন্ধানে

লেখিকাঃ হামিদা মুবাশ্বেরা

প্রকাশনীঃ সমকালীন প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ ২০২০

পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৯৩

মুদ্রিত মূল্যঃ ৪০০ টাকা

প্রাপ্তিস্থানঃ বাংলাবাজার, নিলক্ষেত, কাটাবন সহ বিভিন্ন ইসলামিক লাইব্রেরি। অনলাইনে অর্ডার করে সংগ্রহ করতে পারেন নিয়ামাহ শপ থেকে

আাল্লাহ তায়ালা বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যান দান করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *