পোস্টটি পড়া হয়েছে 3,716 বার
বাইতুল্লাহর মুসাফির baitullahr musafir book review

বাইতুল্লাহর মুসাফির [বই রিভিউ – ১২]

জ্ঞান হবার পর থেকে প্রতিটি মুসলিমের অন্তরই থাকে বাইতুল্লাহর জন্য উদ্বেলিত। আজীবন লালিত হজ্জের এই স্বপ্ন খুব অল্প সংখ্যক সৌভাগ্যবানের জীবনেই পূর্ণ হয়। যারা আল্লাহর ডাকে, আল্লাহর মেহমান হয়ে ক্বাবা ঘরে হজ্জ বা ওমরার সফরে যান তারা সত্যিই ভাগ্যবান। আল্লাহ আপনাকে আপনার পরিবার সহ এবং আমাকে আমার পরিবার সহ বাইতুল্লাহর জিয়ারতের জন্য কবুল করুন। বলুন আমীন।

পরহেজগার ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের হজ্জের সফর কেমন হয়? কেমন ভাবগাম্ভীর্য আর আধ্যাত্মিকতায় পূর্ণ থাকে সফরের প্রতিটি পদক্ষেপ? আল্লাহর বুজুর্গগণ কিভাবে তাকান খানায়ে ক্বাবার দিকে? কিভাবে তাওয়াফ করেন, কিভাবে সায়ী করেন? কেমন আদবের সাথে জিয়ারত করেন এবং সালাম পেশ করেন নবীজির (সা) রওযার সামনে দাঁড়িয়ে? আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে হজ্জের সফরে রওনা হওয়া। প্রখ্যাত আলেম ও সুলেখক আবু তাহের মিছবাহ রচিত “বাইতুল্লাহর মুসাফির” এরকমই একটি বই। যার মাধ্যমে আমরা হজ্জের আধ্যাত্মিকতা এবং জীবনের নানা শিক্ষা অর্জন করতে পারব।

প্রায় ৪৩০ পৃষ্ঠার বইটি সম্প্রতি পড়ে শেষ করলাম। বলা যায় চোখের নিমিষে বইটি শেষ হয়ে গেল। আমার ব্লগের পাঠকদের জন্য বইয়ের সার-সংক্ষেপ ও রিভিউ লিখছি। আশা করছি এর মাধ্যমে আপনার মনে আরো বেশি জেগে উঠবে বাইতুল্লাহর প্রতি ভালোবাসা। আল্লাহর ঘরে উপস্থিত হয়ে “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…” বলার আকুলতা আপনাকে মোহাবিষ্ট করবে।

বাইতুল্লাহর মুসাফির – সার সংক্ষেপ ও বই রিভিউ

বৃহৎ পরিসরের এই বইটিকে ৩-৪টি ভাগে ভাগ করা যায়। লেখক এখানে তিনটি পর্ব উল্লেখ করেছেন। হজ্জের সফরনামা হলেও লেখকের হজ্জের আগে-পরে অন্যান্য সফরও ছিল। সেগুলোও বইটিতে সযতনে সন্নিবেশিত হয়েছে। নিচে প্রতিটি পর্বের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

বাইতুল্লাহর মুসাফির – প্রথম পর্ব

লেখকের হজ্জের প্রথম সফর ছিল ১৪০৩ হিজরি মোতাবেক ১৯৮৩ খৃষ্টাব্দে। আর উক্ত হজ্জের সফরনামাটা লেখা শুরু হয় ২০০৮ সালের দিকে। যা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় মাসিক আলকাউসার পত্রিকায়। আর বই হিসাবে প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে।

হযরত হাফেজ্জি হুজুরের (রহ) নির্দেশে মাদরাসার প্রয়োজনে লেখক সফর শুরু করেন। তার সফর শুরু হয় ১৯৮৩ সালের রমযান মাসে ঢাকা থেকে পাকিস্তান সফরের মাধ্যমে। পাকিস্তানে ১০ দিন থেকে আবুধাবি-তে আরো দশদিন। এরপর কথা ছিল মক্কায় গিয়ে হজ্জ পর্যন্ত হযরত হাফেজ্জী হুজুরের জন্য অপেক্ষা করা। হাফেজ্জি হুজুরের সাথে হজ্জ আদায় করে ইরাক সফর করা। সে সময় ইরাক ও ইরানের মাঝে যুদ্ধ চলছিল। যুদ্ধে ইন্ধন যোগাচ্ছিল যথারীতি আমেরিকা-ইজরাঈল। হাফেজ্জি হুজুর হজ্জের পূর্বে ইরান সফর করেন। এবং হজ্জের পরে ইরাক সফর করেন। উক্ত সফরের উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বন্ধের প্রচেষ্টা চালানো। হজ্জের আগে হাফেজ্জি হুজুর ইরান সফর করেন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ খোমেনীর সাথে দীর্ঘ বৈঠক করেন। হজ্জের পরে ইরাক সফর করেন এবং ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সাথেও বৈঠক করেন। এসব বিষয়ের বিস্তর আলোচনা রয়েছে বইয়ের শেষের ভাগে। যদিও এর সাথে হজ্জের সম্পর্ক নাই, কিন্তু পাঠক একটিও বোরিং ফিল করবেন না এটা হলফ করে বলতে পারি।

পাকিস্তান সফর

লেখক পাকিস্তানে যে ১০ দিন অবস্থান করেছিলেন তার নাতিদীর্ঘ বর্ণনা বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। সফরের মধ্যকার বিভিন্ন ঘটনা সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তা ছিল অধিক ভাব ও অর্থপূর্ণ। যা ছিল অধিক ভাব প্রকাশক। এরকম একটা ঘটনা ছিল পাকিস্তানের এক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশ দিয়ে অতিক্রমের সময় ইফতারের সময় হয়ে এসেছিল। একটি দরিদ্র পরিবার তাদের সামান্য কয়েক টুকরা রুটি আর খুরমা খেজুরের ইফতার লেখকের সাথে ভাগ করে নিয়েছিল। ইফতারের পর ঐ পরিবারের এক বৃদ্ধা লেখকের দিকে এগিয়ে দিলেন এক গ্লাস দুধ। এরপর কান্না জড়ানো কন্ঠে বললেন আমি জানতে পেরেছি তুমি বাইতুল্লাহর মুসাফির। জীবন শেষ হয়ে আসলো, মনের আশা-আকাঙ্খা-স্বপ্ন মনেই রয়ে গেল। আমার মত গরিবের কি আর বাইতুল্লাহর জিয়ারত নসিব হবে? তুমি বাইতুল্লাহর কালো গিলাফ ধরে আমার জন্য দুআ করো। মদীনায় নবীজির (সা) রওযায় আমার সালাম পেশ করো!

পাকিস্তানে তিনি যার বাসায় অতিথি হয়ে ছিলেন, তার ছোট ছেলে। সে জানতো যে লেখক বাইতুল্লাহর মুসাফির, আল্লাহর ঘরে যাবেন। বিদায় নেয়ার আগে তাই সে লেখকের হাতে দুটো চকলেট দিয়ে বলেছিলোঃ “আল্লাহকে চকলেট দুটো দিও”। লেখক মক্কায় এসে এক অনাথ শিশুকে সম্ভবত চকলেট দুটি দিয়েছিলেন। এরকম টুকরো টুকরো অসংখ্য মর্মস্পর্শী ঘটনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে হজ্জের সফরনামা।

আবুধাবি সফর

আবুধাবিতে লেখকের বেশ কিছু সুখ ও কষ্টের স্মৃতি বইয়ে উল্লেখ হয়েছে। এখনকার মত তখনও আরব বিশ্ব ছিল অপচয়ের পুণ্যভূমি (!)। খাদ্যের অপচয় কী জিনিস তা আরব বিশ্বে গেলে দেখা যায়। এটি এখনকার জন্য যেমন সত্য, ১৯৮৩ সালেও তেমনই সত্য ছিল। লেখকের বর্ণনায় খাবারের এই অপচয়ের কথা উঠে এসেছে। এছাড়াও যথারীতি ছোট-বড় বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে এই অংশে। যার কোনোটি হয়ত আমাদের ব্যক্তি জীবনকে সুন্দর করার জন্য উপকারী। কোনোটি দ্বীনি পরামর্শ। আবার কোনো গল্পে রয়েছে অন্তরের প্রশান্তি।

হেজাযের সফর (মক্কা-মদীনা)

আবুধাবি সফর শেষে লেখক রওনা হলেন মক্কা-মদীনার পথে। বিমানে পাশের সিটে বসেছিলেন এক বয়োবৃদ্ধ লোক। এক পর্যায়ে জানতে পারলেন তিনি ফিলিস্তিনের নাগরিক। অভিশপ্ত ইসরাঈলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন একজন মুজাহিদ। তাঁর আব্বা-আম্মাও লড়েছিলেন ইহুদীদের বিরুদ্ধে। তাঁর চোখের সামনে শহীদ হন তাঁর স্ত্রী ও ৬ বছরের শিশু সন্তান। তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং আল্লাহর গায়েবী সাহায্যের মাধ্যমে এ অবস্থাতে জর্ডানে পারি দিতে সক্ষম হন। হেজায সফরের এই অংশে ফিলিস্তিনী এই শায়খের আলাপচারিতা আপনার চোখকে সিক্ত করবে। এরপর বিমান অবতরণের সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যে কেয়ামতের দৃশ্য আঁকা হয়েছে। সেটাও আপনাকে গভীর ভাবে স্পর্শ করবে।

লেখকের ওমরা ও মদীনা জিয়ারতের প্রথম স্মৃতিগুলো বিস্তারিত ও আবেগী ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। লেখকের সফর সঙ্গীদের ২ জন আগে থেকেই মক্কায় ছিলেন। তারাও মাদরাসার জন্য কোনো প্রয়োজনে হযরত হাফেজ্জি হুজুরের নির্দেশেই সেখানে ছিলেন। তাদেরও রমযানের পর ২ মাস অপেক্ষা করে হজ্জ পর্যন্ত থাকার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু তাদের ঐ টিমের যিনি দায়িত্বশীল ছিলেন তার কাছে মনে হয়েছিল মক্কায় মাদরাসার জন্য তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। অকারণে সময় ও টাকা খরচ হচ্ছে। তাই তিনি ও লেখক দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। একজন সফরসঙ্গীকে মক্কা রেখে আসলেন। যেন তিনি হাফেজ্জি হুজুরের সাথে হজ্জ শেষ করে আসেন।

মক্কায় এসে হজ্জ না করে মাত্র কয়েক দিনের মাথায় দেশে ফিরে আসার কষ্ট বইয়ের পাতায় পাতায় বিধৃত হয়েছে। বিভিন্ন চড়াৎ উৎরাই পার করে তারা ২জন দেশে ফিরে এসেছিলেন। হাফেজ্জি হুজুরের সাথে দেখা করলেন। তখন বুঝতে পারলেন যে তারা কত বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হজ্জের এরকম কাছ থেকে ফিরে আসার সে কি বেদনা! আশা করা যায় আপনিও লেখকের ব্যথায় ব্যথিত হবেন। মনে হবে প্রতিটি ঘটনা আপনি নিজে প্রত্যক্ষ করছেন।

বাইতুল্লাহর মুসাফির – দ্বিতীয় পর্ব

লেখক হজ্জ না করে ফিরে আসলেন। এরপর হযরত হাফেজ্জি হুজুর তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে সফর শুরু করলেন। লেখক এয়ারপোর্ট পর্যন্ত গিয়ে তাদের চলে যাওয়া দেখলেন এবং চরম মর্মবেদনা অনুভব করতে লাগলেন। এরপর এক রকম অপ্রত্যাশিত ভাবেই লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে লেখকে হজ্জে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব আসলো। কিন্তু লিবিয়া একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়ায় তাদের অর্থায়নে হজ্জের সফরের মত একটা পবিত্র সফরে বিষয়ে লেখকের মন সায় দিচ্ছিল না। তাই তিনি সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন। কিন্তু পরে হযরত পাহাড়পুরী হুজুরের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ চাওয়ার পর হুজুর লেখককে তিরষ্কার করেন। ফলে তিনি আবার লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন গায়েবী মদদে আল্লাহর ইচ্ছায় আবার হজ্জের সফর শুরু করার সুযোগ পান।

বইয়ের এর পর্যন্ত আসার পর একাধিক বার আমার কাছে একটি শিক্ষা মোটা দাগে ধরা দিয়েছে। তা হলো বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আল্লাহর কোনো মুখলেস বান্দা বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শ গ্রহন। আমরা আমাদের জীবনের অনেক কাজই নিজের বুদ্ধিতে করি এই প্রবাদ মাথায় রেখে যে, “নিজের বুদ্ধিতে ঠগা ভাল”। কথাটি হয়ত পুরোরপুরি ঠিক না। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা) আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন পরামর্শ করে কাজ করার জন্য। তাই আমরা চেষ্টা করব মুরুব্বি বা আমাদের শুভাকাঙ্খীদের সাথে আলোচনা করে কোনো কাজ করার। যেমনঃ লেখকের প্রথমবার মক্কা থেকে ফিরে আসা। তিনি নিজেই বলেছেন যে তার উচিত ছিল ফিরে আসার আগে হাফেজ্জি হুজুরের সাথে যোগাযোগ করে তার মরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার। যা তিনি করেন নি। দ্বিতীয় বার কারো সাথে আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিয়ে লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

যাই হোক, শেষে তিনি সেই বছরই হজ্জে যেতে পেরেছিলেন। সৌদী দূতাবাসের দারোয়ান তাকে ভিসা নেয়ার জন্য দূতাবাসে ঢুকতেই দেয় নি প্রথমে। পরে ইরাকের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে সৌদী রাষ্ট্রদূতের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে শেষ সময়ে এসে ভিসা পান এবং যেদিন সকালে ভিসা পান সেদিন দুপুরেই ছিল হজ্জের শেষ ফ্লাইট। আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি সকালে ভিসা পেয়ে দুপুরে বিমানে উঠতে পেরেছিলেন। সেই সময়গুলোর বর্ণনা আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। মনে হবে কোনো থ্রিলার গল্প বা উপন্যাস পড়ছি। সৌদীর ভিসার পাশাপাশি ইরাকের রাষ্ট্রদূত প্রস্তাব দিলেন হজ্জের পর হযরত হাফেজ্জি হুজুরের সাথে ইরাকেও সফর করার। তিনি তা সানন্দে গ্রহন করলেন।

সোনার মদীনায়

লেখক মদীনার মসজিদে নববীতে জুমআর সালাত আদায় করতে যান। সেখানে তার কাঙ্খিত ব্যক্তিত্ব হযরত হাফেজ্জি হুজুরের সাথে সাক্ষাত হয়। হাফেজ্জি হুজুরের জানা ছিল না যে লেখক আবু তাহের মিছবাহ সাহেব হজ্জের সফরে এসেছেন। তিনি লেখকের আগমনে যারপরনাই আনন্দিত হলেন। এরপর থেকে লেখকের বাকিটা সময় কেটেছে হাফেজ্জি হুজুরের সংস্পর্শে। দীর্ঘ বর্ণনা রয়েছে নবীজির (সা) রওজা জিয়ারতের। যা প্রতিটি পাঠককে আপ্লুত করবে। মনের আবেগ উথলে উঠবে মদীনার সবুজ গম্বুজের প্রতি।

অনেকগুলো মদীনার স্মৃতিচারণ করেছেন লেখক এই পর্যায়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা ছিল একজন আনসারী শায়খের মেহমানদারী। যার সাথে পরিচয় হয়েছিল রাস্তায় বা মার্কেটে। অপরিচিত সেই শায়খের সাথে কথাবার্তায় জানা যায় তিনি আরবের আউস গোত্রের লোক। যার বংশ পরম্পরায় ৩৪ সিঁড়ি উপরে হলেন একজন আনসার সাহাবী (রা)। বইতে সাহাবীর (রা) নাম সম্ভবত ইচ্ছা করেই লেখক উল্লেখ করেন নি। নামের স্থলে ডট ডট দেয়া আছে। পরবর্তীতে হযরত হাফেজ্জি হুজুর সহ সেই আনসারী শায়খের বাসায় লেখক বেড়াতে গিয়েছিলেন। এই অংশের মর্মস্পর্শী বর্ণনা আপনাকে হয়ত নিয়ে যাবে নবীজির (সা) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের সময়ে। যখন শায়খের ৩৪ প্রজন্ম আগের পূর্বপুরুষ নবীজির (সা) সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছিলেন।

মক্কায় হজ্জ যাত্রা

মদীনা থেকে মক্কায় হজ্জের জন্য আসার বর্ণনা লেখক উল্লেখ করেছেন। বইটি যতটা হজ্জের নিয়ম-কানুনের। এরচেয়ে বেশি হজ্জের গাইডলাইন হিসাবে। হজ্জের নিয়মকানুন অনেক বই থেকে শেখা যায়। মুয়াল্লিমের থেকে দেখে দেখে অনুসরণ করা যায়। কিন্তু হজ্জের রূহনিয়্যাতের শিক্ষা পাওয়া যাবে “বাইতুল্লাহর মুসাফির” বইটি থেকে। সুন্নাতের উপর আমল, রাসূলের (সা) পুংখানুপুংখ অনুসরণ ইত্যাদি সম্পর্কে খুঁটিনাটি বর্ণনা রয়েছে বইয়ের পাতায় পাতায়।

লেখক হাফেজ্জি হুজুরের সাথে তাওয়াফে কুদুম করলেন, সাফা-মারওয়ায় সাঈ করলেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাসনূন আমল ও সংশ্লিষ্ট ইতিহাস ও শিক্ষার উল্লেখ রয়েছে। মূল হজ্জের আগে হাফেজ্জি হুজুরকে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রন জানালেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শায়খ আবদুল্লাহ বিন বায (রহ)। সেই সাক্ষাত ও আতিথেয়তার বিস্তর বিবরণ রয়েছে বইটিতে।

হজ্জের বিস্তারিত নিয়মকানুন ধারাবাহিক ভাবে সকল কিছু উল্লেখ না থাকলেও বেশ কিছু শিক্ষা আমি এখান থেকে পেয়েছি। যেগুলো সকল হাজ্জী সাহেবদের মাথায় থাকা বাঞ্চনীয়। নিজের জন্য এবং ভবিষ্যতে যারা বাইতুল্লাহে যাবেন তাদের জন্য কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করছি।

  1. হজ্জের প্রস্তুতি বলতে আমরা শুধু টাকা পয়সা জমানো এবং ভিসা-পাসপোর্টকে বুঝি। কিন্তু এর প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে হজ্জ সংক্রান্ত বিধি বিধান জেনে নেয়া। হজ্জ যার উপর ফরজ, হজ্জকে সঠিক ভাবে আদায় করার ইলম অর্জন করাও তার উপর ফরজ। তাই হজ্জের আগে থেকেই হজ্জের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব আমল ও মাসআলা সম্পর্কে জানা থাকা জরুরি। হজ্জের অন্যতম ফরজ হলো ইহরাম করা। এর মানে শুধু ইহরামের কাপড় পড়া নয়। বরং মিকাতে (নির্দিষ্ট স্থানে) ইহারামের কাপড় পড়ে, ২ রাকাত নামাজ পড়ে ইহরামের নিয়ত করা ও তালবিয়া পড়া। লেখকের বাসে এমন একজন ছিলেন যিনি শুধু ইহরামের কাপড় পড়েছেন। নামাজ, নিয়ত, তালবিয়া কিছুই পড়েন নি। তার হজ্জের একটি ফরজই বাদ পড়ে গিয়েছে। পরে বাস ড্রাউভারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার মিকাতে নিয়ে ঐ ব্যক্তিকে ইহরাম করাতে হয়েছে। তাই হজ্জের পূর্বেই নির্ভরযোগ্য আলিমের তত্ত্বাবধানে থেকে ইলম অর্জন করতে হবে।
  2. হজ্জের সফরে কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না। কাউকে কষ্ট দিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুমু দেয়া বা কাবা ঘর স্পর্শ করা যাবে না।
  3. কেউ কষ্ট দিলে ঝগড়া বিবাদ করা যাবে না। সবর করতে হবে।
  4. চেষ্টা করতে হবে পরহেজগার, আল্লাহওয়ালা আলেমের সাথে হজ্জ করার। পরহেজগার লোকের সাথে থাকলে বেহুদা কথাবার্তায় এই মোবারক সময়গুলো নষ্ট হওয়ার আশংকা কম থাকবে।
  5. বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হজ্জের ইতিহাসগুলো জেনে রাখা। তাহলে হজ্জ আরো বেশি তৃপ্তিদায়ক হবে।
  6. কাবা ঘরে, নবীজির (সা) রওজা সহ প্রতিটি স্থানের আদব বজায় রাখা। বর্তমান সময়ের কথা তো বাদই দিলাম। ১৯৮৩ সালে যখন লেখক হজ্জের সফরে গেছেন তখনও ছবি তোলার হিরিক লেগে থাকতো। আল্লাহ মাফ করুন, এখন তো কাবার চত্বর থেকে ফেসবুক লাইভ, টিকটক ভিডিও ইত্যাদির ছড়াছড়ি। এসব কাজ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজতে রাখুন।
  7. সকল ক্ষেত্রে সুন্নাতের অনুসরণ জরুরি। জামারায় পাথর নিক্ষেপ করা হয় ইবরাহীম (আ) এর স্মৃতির স্মরণে। জামারায় পাথর নিক্ষেপের সুন্নাহ হলো ছোট ছোট পাথর নিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পিঠে রেখে শাহাদাত আঙ্গুলি দিয়ে ছুড়ে দেয়া। আর মুখে আল্লাহু আকবার বলা। কিন্তু তখনও, এখনও কিছু ইলমহীন-আবেগী মানুষ ক্রোধে ক্ষুব্ধ হয়ে বড় বড় পাথর, জুতা-ছাতা ইত্যাদি নিক্ষেপ করে থাকে। যা সুন্নতের খেলাফ ও অন্যকে কষ্ট দেয়ার গুনাহের সাথে সম্পৃক্ত।
  8. সফরের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আল্লাহর উপর ভরসা করে সবর করা। নানা প্রতিকুল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে গায়েবী সাহায্য পাওয়া যায়।
  9. হজ্জের প্রি-রেজিস্ট্রেশনের সময় থেকেই মানসিক ভাবে হজ্জের প্রস্তুতি নেয়া উচিত। যেমনঃ গুনাহ থেকে বাঁচা, ধৈর্যের অভ্যাস, ছাড় দেয়ার মানসিকতা, হজ্জের ইলম অর্জন ইত্যাদি।

আল্লাহ আপনাকে ও আমাকে বার বার মাকবুল হজ্জ ও ওমরা করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

বাইতুল্লাহর মুসাফির – তৃতীয় পর্ব

বইয়ের তৃতীয় পর্বে রয়েছে হযরত হাফেজ্জি হুজুরের সাথে লেখকের ইরাক সফরের দীর্ঘ বর্ণনা। ইরাক-বাগদাদ হলো ইসলামী ইলম, তাহজীব-তমুদ্দুনের এক শীর্ষপীঠ। ইরাকের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় লেখক তাদের সফরসঙ্গীগণ সহ পরিদর্শন করেন নানা দর্শনীয় স্থান।

আবেগী বর্ণনা রয়েছে অনেকগুলো মাযার যিয়ারতের। যার মধ্যে রয়েছে শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহ), ইমাম আবু হানিফা (রহ), প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রাঃ), জুনায়েদ বাগদাদী (রহ) প্রমুখের মাযার যিয়ারত।

ইরাক সফরের উদ্দেশ্য ছিল সেসময়কার চলমান ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান। সে সময় লেখক হাফেজ্জি হুজুরের সফর সঙ্গী হিসাবে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সাথে সাক্ষাত করেন। হাফেজ্জি হুজুর সাদ্দামকে যুদ্ধের পথ থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন এই যুদ্ধে ইরাক বা ইরান আরোর লাভ নাই। একমাত্র লাভ আছে আমেরিকা ও ইজরায়েলের। তাই তিনি সাদ্দাম হোসেনকে ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণা দিয়ে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক দেশ পরিচালনার পরামর্শ দেন। কিন্তু সেই শান্তি আলোচনা সফল হয় নি। সেই মর্মান্তিক ও দেশের জন্য লজ্জাজনক ঘটনাগুলোও বইতে তুলে ধরা হয়েছে। শেষ চেষ্টা হিসাবে হাফেজ্জি হুজুরের চিঠি নিয়ে লেখক গমন করেন সাদ্দাম হোসেনের বাসভবনে। সেখানে পারিবারিক পরিবেশে চিঠি হস্তান্তর করেন এবং তার কিশোর বয়সী দুই ছেলে আদী ও কুসাঈ এর সাথে কিছু সময় কাটান। আজ সাদ্দাম হোসেন পৃথিবীতে বেঁচে নেই। আমেরিকার হাতে শাহাদাত বরণ করেছেন তিনি এবং তার দুই পুত্র। আল্লাহ তাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাত দান করুন।

ইরাক সফরের শেষের দিকে লেখক পরিদর্শনে যান কারবালা প্রান্তরে! আহ কারবালা! এই নামের সাথেই যেন জড়িয়ে আছে প্রতিটি মুমিনের মর্মবেদনা। যেই ফোরাত নদীর বয়ে চলা পানির সাথে মিলে মিশে একাকার হয় প্রতিটি মুসলিমেরই চোখের পানি। উক্ত গ্রন্থে সেই হৃদয় বিদীর্ণ করা কারবালার বর্ণনা পড়লে অতি পাষাণেরও মন ভারাক্রান্ত হবে। নবীজির (সা) প্রতি ভালোবাসা, নবীজির (সা) আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ শুধু মুহাররমে শিরক-বিদআতের মাধ্যমে “হায় হোসেন! হায় হোসেন!” বিলাপ-মাতমের মধ্যমে নয়। শীয়া সম্প্রদায় এসে দেখে যাক! আহলে বাইতের প্রতি মুসলিম ও রাসূলপ্রেমীদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ কিভাবে হয়।

বাগদাদ থেকে বিমানে দেশে ফেরার কথা থাকলেও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। তাই তাদেরকে সড়ক পথে কুয়েত আসতে হয়। সেখান থেকে বিমানে ঢাকা ফিরেন। এর মাধ্যমে লেখক তার সফরনামা শেষ করেন।

বইটি সম্প্রকে আমার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু অভিমত

যদি একটি মাত্র বাক্যে আমার উপলব্ধি প্রকাশ করতে বলা হয়। তাহলে আমি বলব প্রতিটি মুমিনের এই বইটি পড়া উচিত, বিশেষ করে হজ্জের নিয়ত যাদের রয়েছে তাদের প্রত্যেকের। বইটা পড়ার সময় মনে হয়েছিল, যদি আমার সামর্থ্য থাকত তাহলে হজ্জের জন্য যারাই রেজিস্ট্রেশন করেন তাদেরকে এই বই একটি করে গিফট করতাম। হজ্জ এজেন্সির সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ যদি লেখাটি পড়ে থাকেন, তাহলে চাইলে দাওয়াতের এই কাজটি করতে পারেন। আপনার এজেন্সিতে রেজিস্ট্রেশন করলে তাকে বইটি গিফট করুন। রেজিস্ট্রেশনের পর প্রায় এক দেড় বছর অপেক্ষা করতে হয়। এই সময়ের মাঝে যে কেউ নিজেদেরকে সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

বইয়ের লেখন ভঙ্গির ব্যাপারে আমার একটা অবজারভেশন আছে। তা হলো বইটির মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত যারা আছেন তারা বেশি উপকৃত হবেন। বইটির ভাব ও আবেগের যথাযথ প্রকাশ ঘটানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই প্রচুর উর্দু, আরবি আর সম্ভবত কিছু ফারসী শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠাতেই এরকম কয়েকটি করে শব্দ পাওয়া যাবে যেগুলোর অর্থ আমি জানি না। মাসিক আলকাউসার পত্রিকায় এই বইটি প্রথম ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। আর উক্ত পত্রিকার অন্যান্য লেখার ক্ষেত্রেও একথা সত্য যে প্রচুর আরবি, উর্দু পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় মনে হয় এই পত্রিকার লেখাগুলোর টার্গেট অডিয়েন্স হয়ত মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত পাঠক। আম জনতার জন্য হয়ত এই পত্রিকা উপযোগি নয়। নইলে এর লেখন ভঙ্গি বা শব্দচয়ন সাধারন শিক্ষিতদের বোধগম্য হত। তবে একথাও সত্য যে, প্রচুর অর্থ না জানা বিদেশী শব্দের ব্যবহার সত্ত্বেও মূল ভাব ও আবেগ যে কোনো পাঠকের অন্তর ছুঁয়ে যাবে।

বইটিতে লেখকের নিজস্ব কিছু বানান রীতি হয়ত অনুসরণ করা হয়েছে। আমি ঠিক নিশ্চিত নই বানানরীতির ব্যাপারে। এ ব্যাকরণবিদগণ হয়ত ভাল বলতে পারবেন। বেশ কিছু শব্দের বানান একটু ভিন্ন রকম লেগেছে। যেমন “ভুলতে পারা” এটাকে লিখা হয়েছে “ভোলতে পারা”। “বুঝতে পারছি না” এটাকে হয়ত লেখা হয়েছে “বোঝতে পারছি না”। এরকম কিছু জায়গায় পড়তে গিয়ে হোঁচট খেয়েছি অনভ্যস্ততার কারণে।

আর কিছু ক্ষেত্রে আবেগের দীর্ঘ বহিঃপ্রকাশ ও দীর্ঘ বিশেষণ সহ বর্ণনা আমি এড়িয়ে গিয়েছি। বারবার ঢুকতে চেয়েছি মূল সফরনামার কোনো ঘটনা বা বর্ণনায়।

উপরের যে কয়েকটা বিষয়ে নগন্য পাঠক হিসাবে হোঁচট খেয়েছি সেগুলো বাদ দিয়ে একথা বলাই যায় যে, বইটি চুম্বকের মত আমাকে টেনে নিয়ে গেছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। শেষের ৫-৬ পৃষ্ঠা যখন বাকি তখন উল্টে উল্টে দেখতাম আর কয় পৃষ্ঠা বাকি। আর কয়েকটা পৃষ্ঠা পরই তো শেষ হয়ে যাবে এমন চমৎকার একটা বই। ৪০০-৫০০ পৃষ্ঠার বই পড়তে পড়তে এক সময় একঘেয়েমী লেগে যায়। কিন্তু এখানে এসে আকাঙ্খা হচ্ছিল “ইশ আরো বড় হত যদি বইটা!”। এই আফসোস ঘুচানোর জন্য এই বই শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আলমিরা থেকে বের করলাম একই লেখকের আরেকটি বই “বাইতুল্লাহর ছায়ায়”। আল্লাহ উক্ত বইয়ের লেখক হযরত আবু তাহের মিছবাহ সাহেবকে নেক হায়াত দান করুন। আরো বেশি বই লিখার তাওফিক দান করুন। এই বইগুলোর উসিলায় আল্লাহ তাকে ও আমাদের সকললে নাজাত দিয়ে দিন। আমীন।

বই সম্পর্কে কিছু সাধারণ তথ্য

নামঃ বাইতুল্লাহর মুসাফির

লেখকঃ আবু তাহের মিছবাহ্

প্রকাশকঃ দারুল কলম

প্রকাশকালঃ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (প্রথম প্রকাশ)

বইয়ে মুদ্রিত মূল্যঃ ১৮০ টাকা (দারুল কলমের বই মুদ্রিত দামে বিক্রি হয়)

পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৪৩১

প্রাপ্তিস্থানঃ আমি ঢাকার নিলক্ষেত বইয়ের মার্কেট থেকে কিনেছি। বিভিন্ন অনলাইন শপেও পাওয়া যাওয়ার কথা

2 thoughts on “বাইতুল্লাহর মুসাফির [বই রিভিউ – ১২]

  1. আসসালামু আলাইকুম। ভাই, একদম পাইকারী দামে ইসলামিক বই ঢাকার কোথায় পাওয়া যায় বলতে পারেন কি? আর নীলক্ষেতে যেমন সাহিত্যের সব বই পুরনো কমদামি পাওয়া যায়, এধরণের ইসলামি বই কোথাও বিক্রি হয় কি?

    1. ইসলামী বইয়ের ডেডিকেটেড মার্কেট আছে কিনা জানা নাই। বাংলাবাজারে হয়ত একটু কম দামে বই পাওয়া যেতে পারে। বেশি পরিমাণে কিনলে অনলাইন শপগুলোর সাথে পারসোনাল্যি কথা বলতে পারেন যে তারা এক্সট্রা ডিসকাউন্ট দিবে কিনা। নিয়ামাহ শপ, ওয়াফিলাইফ এরকম আরো যেসব অনলাইন শপ আছে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। আমি নিয়ামাহ থেকে বেশির ভাগ সময় কিনে থাকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *