পবিত্রতা একজন মুমিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পবিত্রতার সাথে অনেকগুলো ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জানি, ঘুমালে অযু ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে পবিত্র হওয়ার জন্য আমরা অযু করে থাকি। ঘুম থেকে উঠে, হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে হাত ডুবানো নিষেধ। এতে পাত্রের সম্পূর্ণ পানি নাপাক হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। আর নাপাক পানি দিয়ে অযু শুদ্ধ হয় না। ফলে নামাজও শুদ্ধ হবে না। আজকের পোস্টে এ সম্পর্কে কিছু সতর্কতা ও সংশ্লিষ্ট কিছু হাদীস জেনে নিব ইনশাআল্লাহ।
ঘুম থেকে উঠে হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে হাত ডুবানোর ব্যাপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেননা ঘুমের সময়ে হাত কোথায় ছিল বা হাতে কোনো নাপাকি লেগে গিয়েছিল কিনা তা জানার সুযোগ থাকে না। তাই ঘুম থেকে উঠে আমরা কোনো পানির পাত্রে সরাসরি হাত ডুবিয়ে পানি তুলব না। কারণ, দৃশ্যমান নয় এমন কোনো নাপাকিও যদি হাতে লেগে থাকে। আর সে হাত পানির পাত্রে ডুবানো হয়, তাহলে পাত্রের সম্পূর্ণ পানিই নাপাক হয়ে যাবে। সে পানি দিয়ে অযু-গোসল শুদ্ধ হবে না। অযু শুদ্ধ না হলে নামাজও শুদ্ধ হবে না।
ঘুম থেকে উঠে পবিত্র হওয়ার সঠিক পদ্ধতি
ঘুম থেকে উঠে অযু করার আগে বা পানি ব্যবহারের আগে প্রথমেই দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিব। যদি সুযোগ থাকে, তাহলে পানির ট্যাপ বা কল থেকে হাত ধুয়ে নিব। এটি অধিকতর নিরাপদ। এটা সম্ভব না হলে যদি বালতিতে সংরক্ষণ করা পানি দ্বারা হাত ধুতে হয়, তাহলে সরাসরি বালতির পানিতে হাত ডুবিয়ে পানি তুলে হাত ধৌত করব না। কারণ হাতে যদি কোনো নাপাকি লেগে থাকে তাহলে হাত ডুবানোর কারণে বালতির পুরো পানিই নাপাক হয়ে যাবে।
এজন্য কোনো মগ বা ছোট পাত্র দিয়ে বালতি থেকে পানি তুলে এরপর হাতের উপর পানি ঢেলে হাত পরিষ্কার করব। হাত পরিষ্কার হয়ে গেলে প্রয়োজনে আমরা পানির পাত্রে হাত ডুবিয়ে সেখান থেকে পানি তুলতে পারি।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ
তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে, তখন তিনবার হাত না ধুয়ে যেন পানির পাত্রে তা না ডুবায়। কারণ, তার জানা নেই তার হাত কোথায় ছিল অথবা কোথায় ঘুরাফেরা করছিল। (আবু দাউদ ১০৫)
বুখারী শরীফের আরেকটি হাদীস নিচে তুলে ধরা হলোঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উযূ করে তখন সে যেন তার নাকে পানি দিয়ে ঝাড়ে। আর যে শৌচকার্য করে সে যেন বিজোড় সংখ্যায় ঢিলা ব্যবহার করে। আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে তখন সে যেন উযূর পানিতে হাত ঢুকানোর পূর্বে তা ধুয়ে নেয়; কারণ তোমাদের কেউ জানে না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় থাকে। (বুখারী ১৬২)
এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতকে পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা শিক্ষা দিয়েছেন। হাদীসের মধ্যে বিষয়টি এভাবে এসেছে যে, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর পানির পাত্রে হাত প্রবেশ করানো যাবে না। কারণ ঘুম থেকে সদ্য জাগ্রত ব্যক্তি জানে না যে, রাতের বেলায় তার হাত কোথায় ছিল।
এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাই ঘুম থেকে উঠে আগে হাত ধুয়ে নেয়া পরিচ্ছন্নতা ও রুচির পরিচায়ক। মূলকথা হলো এই যে, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর হাত ধোয়া ছাড়া পানির পাত্রে হাত প্রবেশ করানো মাকরূহ। হাতে নাপাকী থাকা নিশ্চিত হলে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে এবং নাপাক কিছু না থাকলেও পানির পাত্রে হাত প্রবেশের পূর্বে ধুয়ে নেয়া মুসতাহাব।
ঘুম থেকে উঠে কব্জি পর্যন্ত দুই হাত ধোয়ার পর আমাদের করণীয় হচ্ছে নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।
আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠবে সে যেন নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কেননা, শাইতান তার নাকের ভেতর রাত্রি যাপন করে। (মুসলিম ৪৫২)
অর্থাৎ আমরা ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ৩ বার দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করব, এরপর তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করব এবং অযু করে পবিত্র হয়ে নিব।
বালতির পানিতে মগ ডুবিয়ে রাখা – একটি ভুল পদ্ধতি
অনেক বাসাতেই দেখা যায় বালতি থেকে পানি উঠানোর জন্য যেই মগটি ব্যবহৃত হয়, সেটি বালতির পানিতেই সম্পূর্ণ রূপে ডুবানো বা থাকে। ফলে ঐ মগ দিয়ে বালতি থেকে পানি তুলতে চাইলে, বালতির পানিতে হাতের স্পর্শ লাগার প্রায় শতভাগ সম্ভাবনা থাকে। আমাদের হাতে যদি নাপাকি লেগে থাকে, তাহলে বালতির পানি থেকে মগটি তোলার সময়েই হয়ত হাতের স্পর্শে সম্পূর্ণ পানিই নাপাক হয়ে যাবে।
তাই আমাদের উচিত হলো বালতির পানিতে মগ ডুবিয়ে না রাখা। বরং মগটি হাতলের সাহায্যে বালতিতে ঝুলিয়ে রাখা। যে সকল বাসায় বালতিতে মগ ডুবিয়ে রাখার প্র্যাক্টিস রয়েছে আসুন আজ থেকেই এটি পরিত্যাগ করি। বাসার প্রতিটি সদস্যদেরকে উক্ত বিষয়ে সচেতন করি। প্রয়োজনে বারবার মনে করিয়ে দিয়ে সবার অভ্যাসকে পরিবর্তন করে তুলি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে পবিত্রতা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন।
আলহামদুলিল্লাহ,,, একটা নতুন বিষয়ে অবগত হলাম । জাযাকাল্লাহু খাইরান
আলহামদুলিল্লাহ…
ওয়া ইয়্যাক