Post updated on 23rd September, 2022 at 07:18 am
হিজরি ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় মাস সফর। আমাদের সমাজে সফর মাসকে কেন্দ্র করে অনেক কুসংস্কার, কুপ্রথা ও বিদআত প্রচলিত রয়েছে। যার মধ্যে আখেরী চাহার শোম্বাহ নামক ভিত্তিহীন একটি বিদআত অন্যতম। উক্ত দিবসকে কেন্দ্র করে যে বানোয়াট গল্পটি জালিয়াতগণ বানিয়েছেন তা মুহাদ্দীসীন কেরামের মতে ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যাচার বৈ কিছু নয়। আজকের এই লেখায় কথিত আখেরী চাহার সোম্বা ও সফর মাসের অন্যান্য কিছু প্রচলিত ভুল ধারনা সম্পর্কে জানব ইনশাআল্লাহ।
ডিসক্লেইমারঃ আমি ইসলামী শরীয়া বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তি নই। ব্যক্তিগত জীবনে আমি হানাফী ফিকহ অনুসরণ করি। তাই মোটা দাগে হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ, হক্কানী ও গ্রহনযোগ্য আলেমদের বিভিন্ন লেখনী ও বক্তব্যের আলোকে এই লেখাটি লিখছি। লেখাটির শেষে সাধ্যমত সেগুলোর তথ্যসূত্র উল্লেখ করেছি। বিস্তারিত জানার জন্য রেফারেন্সগুলো ঘেটে দেখতে পারেন। আমাদের সমাজের কিছু আলেমগণ না জানার কারণে বা অসতর্কতার কারণে উক্ত দিবসের সমর্থনে ওয়াজ করেন বা বক্তব্য দেন। আর কিছু নামধারী বিদআতপন্থী আলেম রয়েছেন যারা জেনে বুঝেই বিদআতের পিছনে ছুটেন। তাই উক্ত বিষয়ে আপনার দ্বিমত থাকলে সংশ্লিষ্ট রেফারেন্সের স্বত্ত্বাধীকারী আলেমদের সাথে আলোচনা করার অনুরোধ রইলো। ইউটিউব থেকে অসংখ্য অসতর্ক বা বিদআতপন্থী আলেমদের ওয়াজের লিংক এই পোস্টের কমেন্টে না দেয়ার জন্য আগাম ধন্যবাদ।
আখেরী চাহার সোম্বা – ভিত্তিহীন ও বানোয়াট একটি গল্প
আমাদের দেশের মুসলিম সমাজে মোকসেদুল মুমিন, বারো চান্দের ফজিলত ইত্যাদি অনির্ভরযোগ্য ও অগ্রহনযোগ্য কিছু বই প্রচলিত রয়েছে। এধরনের বইপুস্তকে ইসলামের নামে বিভিন্ন রেওয়াজ-রসম বর্ণনা করা হয় যার কোনো ভিত্তি নাই। আখেরী চাহার সোম্বা বিষয়ে মোকসেদুল মোমিন টাইপের কিছু বইতে যে বানোয়াট গল্পটি লিখা হয় তা অনেকটা নিম্নরূপঃ
নবীজি (সা) তাঁর মৃত্যুর পূর্বে সফর মাসের শেষে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সফর মাসের শেষ বুধবারে নবী (সা) খানিকটা সুস্থ বোধ করেন এবং এই দিনে ৭ মশক পানি দ্বারা গোসল করেন। উক্ত রোগমুক্তির ঘটনায় সাহাবীগণ যারপরনাই আনন্দিত হন এবং বিশেষ দুআ, মুনাজাত, ইবাদত করেন। সকল সাহাবীগণ প্রচুর দান সাদাকাহ করেন।
হযরত উসমান (রা) তাঁর খামারের ৭০ টি উট জবাই করে গরীবদের মাঝে বিলি করেন। হযরত আবু বকর (রা) ৭ হাজার দীনার, হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা) ৫ হাজার দীনার, হযরত ওসমান (রা) ১০ হাজার দীনার, হযরত আলী (রা) ৩ হাজার দীনার এবং হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা) ১০০ উট ও ১০০ ঘোড়া আল্লাহর ওয়াস্তে দান করেন। এরপর হতে মুসলিমগণ সাহাবীগণের নীতি অনুকরণ ও অনুসরণ করে উক্ত দিনে দান-সাদাকাহ করে আসছেন।
হযরত নবী করীম (সা) এর এই দিনের গোসলই জীবনের শেষ গোসল ছিল। এর পর আর তিনি জীবিতকালে গোসল করতে পারেন নি তাই সকল মুসলিমদের জন্য এই দিনে ওজু-গোসল করতঃ ইবাদত বান্দেগী করা উচিৎ এবং হযরত নবী করীম (সা) এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করতঃ সাওয়াব রেছানী করা কর্তব্য।
উক্ত গল্পটির কোনো গ্রহনযোগ্য ভিত্তি বা প্রমাণ হাদীস শরীফের বিশাল ভান্ডার থেকে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন জালিয়াতগণ এবং অসতর্ক বক্তাগণ উক্ত গল্পটি বানিয়েছেন এবং বিভিন্ন ওয়াজে-বক্তব্যে প্রচার করেছেন। যার কোনো ভিত্তি নবী (সা) এর কোনো হাদীস অথবা সাহাবীগণের (রা) কোনো হাদীস অথবা তাবেয়ী-তাবে তাবেয়ীগণের (রহ) কোনো বক্তব্যের বিশুদ্ধ সূত্রে পাওয়া যায় না।
নবী (সা) এর জীবনে অনেক বার রোগমুক্তি ও বিপদমুক্তির ঘটনা ঘটেছে। নবী (সা) এক ইহুদীর জাদু থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। হিজরতের মত একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর রহমতে নিরাপদে মদীনায় পৌঁছেছেন। বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেছেন। এরকম অসংখ্য বিপদমুক্তির ঘটনা নবীজির (সা) জীবনে রয়েছে। নবীজির (সা) জীবদ্দশায় বা তাঁর ইন্তিকালের পরে কোনো সাহাবী (রা) বা তাবেয়ী-তাবে তাবেয়ীগণ (রহ) উক্ত বিপদমুক্তির দিবসগুলো বছর বছর পালন করেছেন? হাদীসের বিশাল ভান্ডারে এমন নজীর পাওয়া যায় না।
কথিত আখেরী চাহার সোম্বা নিয়ে কত গল্প ও কত আমল আমাদের সমাজে প্রচলিত। সরকারী ভাবে এই দিন উদযাপন করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই দিন উপলক্ষে বিশেষ ছুটি দেয়া হয়। ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত মনগড়া ও বানোয়াট দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে বিশেষ “মিলাদ মাহফিল” এর আয়োজন করা হয়। প্রতিটি পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে এই দিবসকে কেন্দ্র করে বিশেষ অনুষ্ঠান ও ফিচার প্রকাশ করা হয়। দেশের কিছু আলেম উক্ত দিনের ঘটনা বর্ণনা করে লম্বা ওয়াজ-নসীহত করেন। ইউটিউবে শত শত হাজার হাজার ভিডিও রয়েছে এই দিবস কেন্দ্রীক। যার অনেকগুলো রয়েছে এমন ব্যক্তিদের যাদের নামের আগে শোভা পায় “মুফতি”, “মাওলানা”, “ডক্টর”, “মাদরাসার অধ্যক্ষ” ইত্যাদি। দুঃখজনক হলেও সত্য, উক্ত বক্তাগণ আবেগঘন বক্তব্য দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু আখেরী চাহার সোম্বা বিষয়ে একটি গ্রহনযোগ্য হাদীসও তারা উল্লেখ করতে পারেন না।
আল্লাহ তায়ালা এরকম অসচেতন, অসতর্ক কিংবা জ্ঞানপাপী আলেম সমাজ থেকে আমাদের মত সাধারন মানুষদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।
আখেরী চাহার সোম্বার নামাজ ও অন্যান্য বিদআত আমল
সফর মাসের শেষ বুধবারের কোনো প্রকার বিশেষত্ব হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এ দিনে কোনোরূপ ইবাদত, সালাত, সিয়াম, যিকির, দোয়া, দান, সদকা ইত্যাদি পালন করলে অন্য কোনো দিনের চেয়ে বেশি বা বিশেষ কোনো সাওয়াব বা বরকত লাভ করা যাবে বলে ধারণা করা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা।
তাযকিরাতুল আওরাত, মোকছেদুল মোমিন, বারো চান্দের আমল এজাতীয় কিছু বইয়ে আখেরী চাহার সোম্বার বিশেষ নামাজ ও কিছু বিশেষ আমলের উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আখেরী চাহার সোম্বার নামাজের নিয়ম হিসাবে বলা হয়ে থাকে সফর মাসের শেষ বুধবার সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর ২ রাকাত নামাজ পড়তে হবে। সে নামাজের উভয় রাকাতে সূরা ইখলাস ১১ বার করে পড়তে হবে এবং নামাজ শেষে ৭০ বার বিশেষ দরূদ ও দুআ পড়তে হবে।
উক্ত নামাজ সম্পর্কে আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী (রহ) লিখেছেন যে, সফর মাসের শেষ বুধবারে যে বিশেষ নফল সালাত বিশেষ কিছু সুরা, আয়াত ও দোয়া পাঠের মাধ্যমে আদায় করা হয়, তা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এছাড়াও আখেরী চাহার সোম্বার দিন বিশেষ দুয়া পড়ে পানিতে ভিজিয়ে পান করা ও সেই পানি দিয়ে গোসল করার একটি রেওয়াজ প্রচলিত রয়েছে। এটিও মনগড়া, বানোয়াট একটি রেওয়াজ।
সফর মাসকে অশুভ ও বালা মুসীবতের মাস মনে করা একটি জাহেলী কুসংস্কার
কোন স্থান, সময়, বস্তু বা কর্মকে অশুভ, অযাত্রা, বা অমঙ্গলময় বলে মনে করা ইসলামী বিশ্বাসের ঘর পরিপন্থি একটি কুসংস্কার। আরবের মানুষরা জাহেলী যুগ থেকে ‘সফর’ মাসকে অশুভ ও বিপদআপদের মাস বলে বিশ্বাস করত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদের এই কুসংস্কারের প্রতিবাদ করে বলেন: “…কোন অশুভ অযাত্রা নেই, কোন ভুত প্রেত বা অতৃপ্ত আত্মা নেই এবং সফর মাসের অশুভত্বের কোন অস্তিত্ব নেই।…” [বুখারী ৫/২১৫৯, ২১৬১, ২১৭১, ২১৭৭]
অথচ এরপরেও মুসলিম সমাজে অনেকের মধ্যে পূর্ববর্তী যুগের এ সকল কুসংস্কার থেকে যায়। শুধু তাই নয়, এ সকল কুসংস্কারকে উস্কে দেওয়ার জন্য অনেক বানোয়াট কথা হাদিসের নামে বানিয়ে সমাজে প্রচার করেছে জালিয়াতগণ।
তারা জালিয়াতি করে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে বলেছে, এই মাস বালা মুসিবতের মাস। এই মাসে এত লক্ষ এত হাজার…বালা নাযিল হয়। …এই মাসেই আদম (আঃ) ফল খেয়েছিলেন। এমাসেই হাবীল নিহত হন। এ মাসেই নূহ (আঃ) এর কাওম ধ্বংস হয়। এ মাসেই ইব্রাহীম (আঃ) কে আগুনে ফেলা হয়। …এ মাসের আগমনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ব্যথিত হতেন। এই মাস চলে গেলে খুশী হতেন…। তিনি বলতেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করবে, আমি তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করার সুসংবাদ প্রদান করব।’…ইত্যাদি অনেক কথা তারা বানিয়েছে।
আর অনেক সরলপ্রান বুজুর্গও তাদের এ সকল জালিয়াতি বিশ্বাস করে ফেলেছেন। মুহাদ্দিসগণ একমত যে, সফর মাসের অশুভত্ব ও বালা মুসীবত বিষয়ক সকল কথাই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।
সফর মাসের ১ম রাতের সালাত – ভিত্তিহীন ও বানোয়াট আমল
উপরোক্ত মিথ্যা কথাগুলোর ভিত্তিতেই একটি ভিত্তিহীন ‘সালাতের’ উদ্ভাবন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কেউ যদি সফর মাসের ১ম রাত্রিতে মাগরিবের পরে … বা ঈশার পরে… চার রাকআত সালাত আদায় করে, অমুক অমুক সূরা বা আয়াত এতবার পাঠ করে … তবে সে বিপদ থেকে রক্ষা পাবে, এত পুরস্কার পাবে… ইত্যাদি। এগুলি সবই ভিত্তিহীন বানোয়াট কথা, যদিও অনেক সরলপ্রাণ আলেম ও বুজুর্গ এগুলি বিশ্বাস করেছেন বা তাদের বইয়ে ও ওয়াজে উল্লেখ করেছেন [যেমন খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার, রাহাতুল কুলুব- পৃষ্ঠা ১৩৮-১৩৯; মুফতি হাবীব ছামদানীর, বার চান্দের ফজীলত- পৃষ্ঠা ১৪]
সফর মাসের শেষ বুধবার
বিভিন্ন জাল হাদীসে বলা হয়েছে, বুধবার অশুভ এবং যেকোনো মাসের শেষ বুধবার সবচেয়ে অশুভ দিন। আর সফর মাস যেহেতু অশুভ, সেহেতু সফর মাসের শেষ বুধবার বছরের সবচেয়ে অশুভ দিন এবং এই দিনে সবচেয়ে বেশী বালা মুসীবত নাযিল হয়। এই সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা অনেক সরলপ্রাণ বুজুর্গ বিশ্বাস করেছেন।
একজন লিখেছেন, “সফর মাসে এক লাখ বিশ হাজার ‘বালা’ নাজিল্ হয় এবং সবদিনের চেয়ে বেশী আখেরী চাহার শম্বা(সফর মাসের শেষ বুধবার) তে নাযিল হয় সবচেয়ে বেশী। সুতরাং ঐ দিনে যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত নিয়মে চার রাকআত নামাজ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ঐ বালা হতে রক্ষা করবেন এবং পরবর্তী বছর পর্যন্ত তাঁকে হেফাজত রাখবেন…। [খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার, রাহাতিল কুলুব- পৃষ্ঠা ১৩৯] এগুলি সবই ভিত্তিহীন কথা।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, সফর মাসের শেষ বুধবারের কোন প্রকার বিশেষত্ব হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়। এই দিনে ইবাদত, বন্দেগী, সালাত, সিয়াম, জিকির, দোয়া, দান, সদকা ইত্যাদি পালন করলে অন্য দিনের চেয়ে বেশী বা বিশেষ কোন সওয়াব বা বরকত লাভ করা যাবে বলে ধারনা করা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা। আল্লাহ আমাদের সকলকে সর্ব প্রকার বিদ’আত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।
সফর মাসের ফজিলত ও আমল
মুহাদ্দীসীন কেরামের মতে সফর মাস কেন্দ্রীক বিশেষ কোনো ফজিলত সম্বলিত হাদীস পাওয়া যায় না। সফর মাস উপলক্ষ্যে বিশেষ কোনো আমলের বর্ণনাও কোনো গ্রহনযোগ্য বিশুদ্ধ হাদীস থেকে পাওয়া যায় না। তাই আমরা সফর মাসের জন্য স্পেশাল কোনো আমল বা ফজিলতের ব্যাপারে বিশ্বাস রাখব না। সফর মাসকে অশুভ বা বালা-মুসিবতের মাস হিসাবে যেই কুসংস্কার আছে সেগুলোও বিশ্বাস করব না।
অন্যান্য মাসে যে সকল সাধারন আমল রয়েছে সফর মাসেও সেগুলো করার চেষ্টা করব। যে আমলগুলো জেনারেল, যেগুলো সকল মাসেই করণীয়; সেগুলো আমরা এ মাসেও করব। যেমনঃ অন্যান্য মাসের মত সফর মাসেও আমরা আইয়ামে বীজের ৩ টি নফল রোজা রাখব। সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার চেষ্টা করব। নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ব ইনশাআল্লাহ। ঘুমাতে যাওয়ার আগের আমল সহ সকল কাজে সুন্নাহ এর অনুসরণ করব। এছাড়াও সালাতুদ দুহা সহ অন্যান্য সুন্নত ও নফল নামাজের আমল করব। এছাড়াও সফর মাস সহ সকল মাসের জুমআর দিনে বিশেষ কিছু আমল করব।
তবে মনে রাখতে হবে যে, এই আমলগুলো মোটেও সফর মাসের বিশেষ আমল নয়। বরং অন্যান্য সকল মাসের জন্য এই আমলগুলোর যেই ফজিলত ও সওয়াব। সফর মাসের জন্যও সেই একই ফজিলত ও সওয়াব। কোনো আমলকেই সফর মাসের জন্য খাস বা বিশেষায়িত মনে করব না।
তথ্যসূত্র
- একটি ভিত্তিহীন রসম – আখেরি চাহার শোম্বা কি উদযাপনের দিবস? – মাসিক আলকাউসার
- হাদীসের নামে জালিয়াতি (পৃঃ ৫১২-৫১৮) – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)
- একটি ভিত্তিহীন আমল – আখেরি চাহার শোম্বাহের নামাজ – মাসিক আলকাউসার
- ফজিলতপূর্ণ দিবস রজনী – মাওলানা মুহাম্মাদ ফজলুল বারী – মাসিক আলকাউসার
- আখেরী চাহার সোম্বা কী? (৫ মিনিটের ভিডিও) – শায়খ আহমাদুল্লাহ
- আখেরি চাহার সোম্বার দিন দুআ লিখে পানি খাওয়া – iFatwa
Woandarfull Jajak Allah khaer
লেখা কপি করতে পারব?
ওয়েবসাইট থেকে কোনো লেখা কপি করে কোথাও পোস্ট করার অনুমতি নাই। প্রতিনিয়ত ব্লগের লেখাগুলোকে আপডেট করা হয়। আপনি একটি লেখা কপি করে প্রচার করলে সেখানে কোনো ত্রুটি থেকে থাকলে তা আর সংশোধনের সুযোগ থাকবে না।
লেখাটি আপনার কাছে ভাল এবং উপকারী মনে হলে পোস্টের লিংক শেয়ার করতে পারেন।
JajakAllahu khairan😊
মাশাআল্লাহ, অসম্ভব সুন্দর ও তথ্যপূর্ণ এবং সত্য কথা।
বোখারির হাদিসে ৭ মশক পানি দিয়ে গোসল করার পর নবীজীর সুস্থতার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে । এই ঘটনাই আখেরি চাহারশূম্ভা।মুমিন হলে মানো আর মুনাফিক হলে অস্বীকার ক্রোর।
জনাব,
টু দি পয়েন্টে আমার কিছু জানার ছিল। আশা করি আপনিও টু দি পয়েন্টে উত্তর দিবেন। আমি প্রচলিত আখেরী চাহার সোম্বার বানোয়াট রেওয়াজ বা বিদআতের অনুসরণ করি না। সে হিসাবে আপনার যুক্তি আমাকে মুনাফিক সাব্যস্ত করে। আপনি তো মাশাআল্লাহ ভাল মুমিন। অনুগ্রহ করে নিচের পয়েন্টগুলোর উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
1. বুখারীর ৭ মশক পানি দিয়ে গোসল করার হাদীসে কি উল্লেখ আছে সেদিন ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার? বিদআতীরা সফর মাসের শেষ বুধবারেই তো এই রসম পালন করে।
2. উক্ত হাদীসে কি উল্লেখ আছে সাহাবীগণ (রা) উক্ত দিনে হাজার হাজার দিনার দান করেন, শত শত উট জবাই করে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন? বিদআতীরা এটিও খুব জোরে শোরে প্রচার করে।
3. নবীজির (সা) ইন্তিকালের পরের বছর হতে খায়রুল কুরুনের সময়টুকুকে সাহাবীগণ, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ আপনাদের মত করে উক্ত দিন প্রতি বছর পালন করেছেন — এরকম কোনো গ্রহণযোগ্য হাদীসের দলিল কি দিতে পারেন?
4. এই দিনে বিশেষ দুআ ও বিশেষ দরূদ পড়া; দুআ পড়ে পানিকে ফু দিয়ে সে পানি পান করলে ও তা দিয়ে গোসল করলে রোগশোক হবে না … এই আমল কোনো গ্রহনযোগ্য হাদীসে কি পাওয়া যায়? দলিলটা কাইন্ডলি দিবেন।
সহমত
Nice…
আলহামদুলিল্লাহ ভাই আপনার লেখাটি পেয়ে অনেক খুশি হলাম এবং একটি প্রচলিত ভুল সম্পর্কে জানতে পারলাম। জাযাকাল্লাহু খাইরন একটু কাইন্ডলি যদি এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতেন প্রচলিত বেদাত শবে মেরাজের কিছু আমল এবং নামাজ মুহাররমের ১০ তারিখে হালুয়া বানানো শবেবরাতে হালুয়া বানানো বিভিন্ন মিলাদ মাহফিলে যাওয়া চল্লিশা খাওয়া ইত্যাদি
জাজাকাল্লাহ খাইরান প্রিয় ভাইয়া।আপনার মুসলিম ডে এ্যাপসের পাশাপাশি এই ওয়েবসাইট থেকেও অনেক উপকৃত হই।আল্লাহ যেন আপনাকে আরো বেশি করে দ্বীনের পথে কাজ কন্টিনিউ করার তৌফিক দান করেন।আমিন।
প্রিয় হাসান, আপনি একটি উত্তম আমলকে বিদআ’ত ফত্ওয়া দিতে যা যা করণীয় সব করেছেন, বাহবা ও পাচ্ছেন বা পাবেন, কারণ বর্তমানে আপনাদের অনুসারীদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়! যেটা ক্বিয়ামতের আলামত ও বটে। (মূর্খ আলিম না জেনে ভূল ফতওয়া দিবে আর মানুষ তাদের অন্ধের মত অনুসরণ করবে) সবচেয়ে অবাক হয়েছি আপনার ‘তথ্যসূত্র’ দেখে !!! এতেই বোঝা যায় আপনার ইলমের পরিধি কতটুকু। কথায় আছে না “ব্যক্তির কথা তার জ্ঞানের মানদণ্ড”
ভাই, আপনার কথা আংশিক সত্য। শেষের কথাগুলো দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন আমি গন্ডমুর্খ এবং আমার জ্ঞানের পরিধি খুবই কম। এটি যথার্থ মূল্যায়ন। দ্বীনের জ্ঞান আমার শূন্যের কোঠায়। এটি আপনি সঠিকই বলেছেন। আমি মেনে নিচ্ছি। লেখার শুরুতেই ডিসক্লেইমারে বলা আছে যে পোস্টের কথাগুলো আমার নিজস্ব কোনো রিসার্চ না। বরং আমি প্রসিদ্ধ ও হক আলেমদের কথাকে উদ্বৃত করছি। আপনার কমেন্টে আমার জ্ঞানের মানদন্ড বিষয়ক কথাটি সত্যই বলেছেন।
কিন্তু মিথ্যাচার করেছেন প্রথম অংশে। উত্তম আমলকে বিদআত হিসাবে বর্ণনা করা হয় নাই। আমি কোনো ফতোয়াও দেই নাই। ফতোয়া দেয়া আমার কাজ না। আপনি এবং আপনার মত উক্ত দিবস উদযাপনকারীগণের থেকে এটা জানতে চেয়ে চেয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি যে আপনারা উক্ত দিবস এবং উক্ত কিসসাটি কোথা থেকে পেলেন? এটা উত্তম আমল হলে অবশ্যই কুরআন, হাদীস কিংবা সাহাবীদের আমলের মাঝে পাওয়া যাবে। কোন হাদীসের কিতাবে আছে? গ্রহনযোগ্য বিশুদ্ধ সনদের হাদীস আপনারা কেন উপস্থাপন করছেন না? কেবল আবেগে গদগদ হয়ে মনগড়া কিসসা কাহিনী বর্ণনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই আপনাদের?
যেই আলেমদের কথার আমি আস্থা রাখতে পারি, তারা বলেছেন এই দিবসের আবিষ্কার হয়েছে তাবেয়ী যুগেরও ১ হাজার বছরের পরে। তো বিষয়টি যদি আরো আগে থেকে পালন হয়ে থাকে এবং সাহাবীগণ উদযাপন করে থাকে তাহলে তা আপনারা কিভাবে জানলেন? নিশ্চই হাদীসের মাধ্যমে। তো সেই হাদীস পেশ করেন। আমরাও সেটা নিশ্চিত হয়ে আমল করা শুরু করি। বিষয়টা তো সিম্পল!
কিন্তু বিদআতপন্থী লোকেরা কখনোই এটার পক্ষের কোনো গ্রহনযোগ্য দলিল হাদীসের কিতাব থেকে দিতে পারবে না। কারণ নবীজির (সা) ইন্তেকালের ১১০০-১২০০ বছর পর যেই জিনিস বিদআতপন্থীদের উর্বর মস্তিষ্ক (!) থেকে প্রসূত হয়েছে তার দলিল কোথা থেকে দিবে?
আমার ইলম-জ্ঞান নাই সেটা ঠিক। কিন্তু রেফারেন্সে যাদের উল্লেখ করা হয়েছে তাদেরও কি জ্ঞান নাই? ইসলাম বিষয়ে উচ্চতর রিসার্চ সেন্টার মারকাযুদ্দাওয়াহ এর পত্রিকা আলকাউসার। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, শায়খ আহমাদুল্লাহ। ৩ ঘরানার আলেমদের ৩টি রেফারেন্স দিয়েছি। ৩ জনের বিষয়ে একটা জিনিস কমন। তা হলো উক্ত ৩ জনই বিদআতপন্থীদের বিরাগভাজন। এছাড়া তাদের ব্যাপারে এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলার মনে হয় সুযোগ নাই।
আল্লাহ আমাদেরকে বিদআত থেকে রক্ষা করুন। মোহরাঙ্কিত অন্তর থেকে হেফাজত করুন।
নতুন একটা বিষয় এ সুন্দর ভাবে ক্লিয়ার ধারনা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,কোন ছোয়াছে রোগ নেই, কুলক্ষণ বলতে কিচ্ছু নেই, ভুতুম পেচা ও সফর মাস কোন অশূভ বা কুলক্ষণ নয়।
(বুখারী২ঃ৮৫৭,মেশকাত পৃঃ৩৯১)