Post updated on 21st February, 2020 at 09:39 am
কোনো একজন জ্ঞানী-গুণী মানুষের এই ধরণের একটা কথা শুনেছিলামঃ তুমি ইসলামকে অস্বীকার করতে পার, কিন্তু মুহাম্মদকে (সা) কিভাবে অস্বীকার করবে? এই কথারই যেন বাস্তব উদাহরণ আজকের আলোচ্য বই “তোমাকে ভালবাসি হে নবী”। বইটির রচয়িতা পাকিস্তানের শিখ ধর্মাবলম্বী অ্যাডভোকেট গুরুদত্ত সিং দারা। উর্দু ভাষায় রচিত মূল বইয়ের নাম “রাসূলে আরাবী”। উর্দু থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন স্বনাম ধন্য ইসলামী সাহিত্যের লেখক ও প্রথিতযশা ইসলামিক স্কলার মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ। বর্তমান সময়ের ইসলামী জ্ঞানের জগতে যারা বিচরণ করে জ্ঞান আহরণে আগ্রহী, এমন প্রত্যেকেই আবু তাহের মিছবাহ সাহেবের লেখালেখির খবর রাখেন। এমন সুসাহিত্যিক একজন আলেমে দ্বীনের অনুবাদে বইটি একটি বিশেষ মাত্রা পেয়েছে।
ভিন্ন ধর্ম বিশ্বাস থাকার পরেও জনাব গুরুদত্ত সিংয়ের লেখা উক্ত বইয়ের শব্দে শব্দে উদ্বেলিত হয়েছে নবী (সা) এর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসা। তার মত এত সুন্দর করে আমরা যারা নবীর (সা) অনুসারী তারাও হয়ত সবাই বলতে পারব না। নবীর (সা) কথা, কাজ, তাঁর ব্যক্তিত্বকে তিনি অসামান্য আবেগ আর প্রেমে উদ্ভাসিত শব্দমালায় গেঁথেছেন। বইটি পড়ার সময় লেখকের আকুল অনুভুতির সাথে আপনিও যে কখন একাত্ব হয়ে যাবেন টেরও পাবেন না। প্রিয় নবীর আবির্ভাব যদি ভারতবর্ষে হত! যদি আমরা তার পদধূলিতে ধন্য হতে পারতাম! আমাদের দেশের মাটিতে যদি প্রিয় নবীর পদচিহ্ন আর তার গায়ের সুবাস মাখা থাকত! এরকম অন্তরের গভীর থেকে বেরিয়ে আসা অনুভুতি আপনাকেও মোহাবিষ্ট করবে বইটির পাতায় পাতায়।
বইটি সম্পর্কে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সিরাত বা নবীর (সা) এর জীবনী গ্রন্থের লেখক আল্লামা সৈয়দ সোলায়মান নদভী (রহ) এর রিভিউ উল্লেখ না করলেই নয়। যা বইয়ের শুরুতেই স্থান করে নিয়েছে। আল্লামা নদভী বলেনঃ
ইতিহাসের মানদন্ডে এর চেয়ে উচ্চস্তরের গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব ছিল, তবে এটা অসম্ভব যে, কোনো অমুসলিম লেখক ভক্তি-ভালবাসার, এর চেয়ে সুন্দর কোনো উপঢৌকন দরবারে নববীতে পেশ করতে পারবেন। আর এটাই আলোচ্য গ্রন্থের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্য।
রাসূলের (সা) জীবনী হিসাবে বইটি বেশ সংক্ষিপ্তই বলতে হবে। কারণ রাসূলের (সা) জীবনী বলত আমরা তাঁর জন্মের আগের প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে তার জন্ম, শৈশব-কৈশর, যৌবন ও তাঁর নবুয়তী জীবনের সকল কিছুকেই বুঝি। অনেক বিস্তারিত ও বড় আকারের সিরাত গ্রন্থ ইসলামী সাহিত্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। এরপরও ১১০ পৃষ্ঠার এই ছোট্ট বইটিও পাঠক হৃদয়ে নাড়া দিতে সক্ষম।
বইটিকে লেখক চারটি অধ্যায়ে সাজিয়েছেন। প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে রাসূলের (সা) জন্ম থেকে শুরু করে হযরত খাদিজার (রা) সাথে বিবাহ বন্ধনের ঘটনা পর্যন্তের বর্ণনা। দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে নবুয়ত প্রাপ্তি থেকে তায়েফের ঘটনা, এরপর মুতইমের আশ্রয়দান এবং তোফায়েলের (রা) ইসলাম গ্রহণের বর্ণনা। তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে নবীজির (সা) হিজরত থেকে শুরু করে বদরের যুদ্ধ, ওহুদের যুদ্ধ ও খন্দকের যুদ্ধের ঘটনা। সর্বশেষ ও চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে হোদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনা থেকে শুরু করে খায়বার যুদ্ধ, মুতার যুদ্ধ, মক্কা বিজয়, বিদায় হজ্জ ও সবশেষে নবীর (সা) চিরবিদায়। যেহেতু বইটির কলেবর খুবই ছোট তাই স্বাভাবিক ভাবেই বুঝে নিতে হবে এখানে নবীর (সা) জীবনের সকল ঘটনার উল্লেখ নাই। বা এটাকে পূর্ণাঙ্গ জীবনীও বলা যাবে না। বরং বলতে পারি নবীজির (সা) জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো, ইসলামের টার্নিং পয়েন্টগুলো এখানে লেখক সংক্ষেপে তুলে এনেছেন।
যারা ইসলামী সাহিত্য বা ইসলামী বই অধ্যয়নের অঙ্গনে নতুন, বা আগে কোনো সিরাত গ্রন্থ পড়া হয়ে ওঠে নি তাদের জন্য এই বইটি হতে পারে চমৎকার একটি সূচনা। বইটি হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলে এর গতিময়তা আর চমৎকার ভাষাশৈলীর জন্য এক বসাতেই পড়া শেষ হয়ে যাবে। কখনো কখনো চোখের কোণে চিকচিক করে উঠবে দুই-এক ফোঁটা অশ্রু। কখনো গলার মাঝে ধরে আসবে চাপা কষ্টের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে। কখনো আনন্দে উচ্ছসিত হবে হৃদয় ও মন। ইসলামী বইয়ের বা সিরাত গ্রন্থ পড়ার দিক দিয়ে নতুন পাঠকদের এটা পড়তে পরামর্শ দেয়ার কারণ এই যে, এর মাধ্যমে নবীর (সা) জীবন সম্পর্কে জানার যে আগ্রহ তৈরি হবে তা কল্পনাতীত। তখন এই আগ্রহে ভর করেই বড় বড় সিরাত গ্রন্থ পড়া শুরু করতে দ্বিধা বা সংকোচ থাকবে না। সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলোকে আরো বিস্তারিত জানার জন্য মন থেকে একটা তাকিদ আসবেই ইনশাআল্লাহ। আর একই সাথে নবীজির (সা) দেখানো পথ অনুযায়ী নিজের জীবনকে সাজানোর আগ্রহও তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ।
বইটি সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য
মূল উর্দু বইয়ের নামঃ রাসূলে আরাবী
মূল বইয়ের লেখকঃ গুরুদত্ত সিং দারা
অনুবাদঃ মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ
অনুবাদটি প্রকাশ করেছেঃ দারুল কলম (২য় প্রকাশ ২০০২ সাল)
অধ্যায় সংখ্যাঃ ৪
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১০৮
মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০ টাকা
অনলাইনে অর্ডার করে বইটি কিনতে পারেন নিয়ামাহ বুকশপ থেকে।
বইয়ের লেখক, প্রকাশক ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদানের দুআ রইল।
সকল পাঠকের কাছে আন্তরিক অনুরোধ, আপনার দুআয় আমাকে রাখবেন। আল্লাহ যেন আমার ও আমার পরিবারের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সুখ ও প্রশান্তি দান করেন, যেন সকল পেরেশানী দূর করে দেন। আল্লাহ যেন আমাকে লোক দেখানো কাজ করা থেকে বিরত রাখেন। আল্লাহ যেন আমাকে ঋণগ্রস্থ না করে দেন। আল্লাহ যেন দুনিয়া ও আখিরাতে আমার দোষত্রুটি গোপন করেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইলম অর্জন ও সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
একজন শিখ ধর্মাবলাম্বী রাসূল (স) কে নিয়ে বই লিখেছেন – ব্যাপারটা বেশ আশ্চর্যজনক। বিশেষ করে, এই উপমহাদেশে গত কয়েক শতাব্দীতে শিখ এবং মুসলমানদের সংঘর্ষের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার বিবেচনায় অবাক হবার মতো ঘটনাই বটে। যাহোক, আপনার রিভিউ পড়ে আগ্রহ তৈরী হলো, দেখা যাক পড়া হয় কিনা। ভালো থাকবেন।
মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই! একটা সময় সম্ভবত ফেসবুকে আপনার লেখা অনেক পড়া হত। মুভি লাভারসে হয়ত, ঠিক মনে নাই। আমার ব্লগে আপনার মন্তব্য দেখে খুব ভাল লাগল। বারাকাল্লাহু ফী কুম।