পোস্টটি পড়া হয়েছে 7,746 বার
দুয়া কবুলের গল্পগুলো - বই রিভিউ

দু’আ কবুলের গল্পগুলো – [বই রিভিউ – ১]

Post updated on 21st February, 2020 at 09:39 am

সদ্য অনার্স পাস করা যুবক, চাকরি হচ্ছে না। হয়ত একটা চাকরি জুটেছে কিন্তু বেতন আর অন্যান্য বিষয় মোটেই অনুকুলে না।
 
ভর্তি পরীক্ষায় কোথাও টিকলো না সদ্য কৈশর পার হওয়া ছেলেটি। কেউ আবার টিকেছে ভার্সিটিতে কিন্তু পায় নি পছন্দের সাবজেক্ট।
 
অনেক ভেবেচিন্তে আশা নিয়ে বিয়ের পর দেখা গেল সংসারে অশান্তি। শেষে হয়ত ডিভোর্সে গড়ালো।
সুখের সংসার, কিন্তু সংসারে একটা সন্তান নাই। কারো হয়ত সন্তান আছে কিন্তু সে এমন অসুস্থ্য যে জন্মের পর থেকে হাসপাতালেই কাটছে জীবনের বেশির ভাগ সময়।
 
ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি… সমস্যাগুলো আমাদের চারপাশে খুব কমন। এই সমস্যাগুলোর সমাধান আমরা কিভাবে করি? চাকরির জন্য হয়ত মামা-চাচা ধরি বা ঘুষ দেই। ভাল সাবজেক্টে চান্স না পেয়ে হয়ত ডিপ্রেসন কাটানোর জন্য ধুমপান বা নেশাপণ্যের বিলাস যাপন করে কেউ কেউ। সন্তানের জন্য ডাক্তার-বদ্যি-কবিরাজ…
 
কিন্তু এমন একটা কাজ করতে আমরা সাধারণত ভুলে যাই বা সেই কাজটা করার কথা আমাদের মাথাতেই আসে না তা হচ্ছে আল্লাহর কাছে বিপদ মুক্তির জন্য দুআ করা। আমরা নিজেদের জন্য নিজেরা দুআ করতে কমফোর্ট ফীল করি না। হুজুরকে দিয়ে দুআ করাই। আল্লাহর নেক বান্দাদের দিয়ে দুআ করানোর দৃষ্টান্ত আমরা হাদীসে পাই। কিন্তু আমার আকুতি, আমার চাহিদা, আমার আবেগ আমার সমস্যার কথা আমি যেভাবে আল্লাহর কাছে বলতে পারব সেটা একজন হুজুর কতটা পারবেন? হুজুর তার নিজের জন্য, আমার জন্য দুআ করে আল্লাহর কাছে প্রিয় পাত্র হবেন। সেই দুআকারী প্রিয় পাত্র কি আমরা হতে পারি না?
 
আমরা আসলেই কি বিশ্বাস করি যে দুআর মাধ্যমে আমাদের জীবনকে আমরা পরিবর্তন করে দিতে পারি? দুআর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক পেতে পারি, এটা কি আসলেই আমরা বিশ্বাস করি? আসলেই কি এখনকার জমানাতেও দুআ করলে আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দেন? এখনো কি দুআর মাধ্যমে অলৌকিক ভাবে সমস্যার সমাধান হয়? আমাদের সমসাময়িক সময়ে এমন উদাহরণ কি রয়েছে?
 
এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর একত্রে পাওয়া যাবে দুআ কবুলের গল্পগুলো বইটিতে। প্রায় সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা দ্বারা বইটিকে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি গল্প বা ঘটনাই হৃদয়কে স্পর্শ করে যাবার মত। প্রতিটা গল্প পড়ার পরই আপনার মুখ থেকে স্বতস্ফূর্ত ভাবে বের হয়ে আসবে সুবহানাল্লাহ তাসবীহ। প্রতিটি পাতায় পাতায় আপনি প্রমাণ পাবেন আল্লাহ যে বান্দার ডাকে সাড়া দেন তার সত্যতা। আপনার হতাশা আর কষ্টের জীবনে আরেকবার ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পাবেন আল্লাহর কাছে দুআ করার মাধ্যমে। এ বইটি  আপনার অবসর সময়গুলো বা বাসের বিরক্তিকর জ্যামের সময়গুলোকে দুআর মত একটা ইবাদতের উসিলা হতে পারে।
 
একটি ঘটনা এখানে সংক্ষেপে শেয়ার করা যেতে পারে। মিসরীয় এক মা বাড়িতে একা থাকা অবস্থায় তার মেয়ে খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো। একা বাইরে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ ছিল না বা টাকা পয়সাও ছিল না। সেই মা একমাত্র ভরসা করলেন আল্লাহর উপর আর প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে লাগলেন। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করেই যাচ্ছিলেন।  হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ! জানতে চাইলে আগন্তুক উত্তর দিলেন তিনি একজন ডাক্তার! রুগি দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে ওঠার সময় ডাক্তার তার ভিজিট চাইলেন। মা জানালেন তাকে দেয়ার মত কোনো টাকাই তার কাছে নাই। সেই ডাক্তার বেশ বিরক্তই হলেন। বললেন রাত দুপুরে ফোন করে ডেকে এখন বলছেন টাকা নাই? সেই মা জানালেন তিনি ফোন করেন নি, এমন কি তার বাড়িতে কোনো টেলিফোনের লাইনও নাই! ডাক্তার অবাক হয়ে জানতে চাইলেন এটা ২০৩ নাম্বার বাড়ি তো? ভদ্র মহিলা জানালেন এটা ২০৩ না, বরং পাশের বাড়িটার নাম্বার ২০৩! তারা হয়ত তাদের কোনো রুগির জন্য ফোন করেছে। ডাক্তারের যেন বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতাও শেষ হয়ে গেছে। সেই মায়ের কাছে জানতে চাইলে মা জানালেন তিনি মেয়ে অসুস্থ্য হবার পর থেকে শুধু আল্লাহর কাছেই দুআ করে যাচ্ছিলেন। আল্লাহর সাহায্যের প্রতিই তিনি একমাত্র মুখাপেক্ষী ছিলেন। আর আল্লাহই এই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন! সুবহানাল্লাহ!!!
 
এরকম ঈমান বাড়িয়ে দেয়ার মত ৪৩ টি ঘটনা পাওয়া যাবে এই বইটিতে। একই সাথে বইয়ের শেষে রয়েছে দুআ কবুল হওয়ার জন্য কিছু টিপস। আছে দুআ কবুল হওয়ার কিছু ক্ষেত্র, স্থান ও সময়ের উল্লেখ।
 
আপনার মধ্যে এই বইটি দুআ করার আনন্দ আর প্রশান্তি ছড়িয়ে দিতে পারে। আপনি যদি জীবনের কঠিনতম কোনো পরিস্থিতি পার করতে থাকেন তাহলে এখনি সময় এই বইটি পড়ে ফেলার!

বই সম্পর্কিত কিছু তথ্য

দুআ কবুলের গল্পগুলো বইটি মূলত একটি অনুবাদ গ্রন্থ। বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ইউটিউবে ইসলামিক স্কলারদের লেকচার থেকে এর মূল কনটেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।
 
লেখাগুলো সংগ্রহ, অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ রাজীব হাসান
প্রকাশকঃ আযান প্রকাশনী
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৯২
গল্প সংখ্যাঃ ৪৩
ডিসেম্বর ২০১৯ সংস্করণ
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫০ টাকা
অনলাইন পরিবেশকঃ রকমারি, ওয়াফি লাইফ, সিজদাহ ইত্যাদি
অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন ইসলামী বইয়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান নিয়ামাহ বুক শপ থেকে।
 
বইয়ের প্রচ্ছদ আর কাগজের মান বেশ ভাল। কিন্তু বইটি পড়ার সময় পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় থাকা বানান ভুল আমাকে যথেষ্ট বিরক্ত করেছে। অসংখ্য বানান ভুলের পাশাপাশি আছে একেক জায়গায় একেক বানান রীতি অনুসরণ। একই পৃষ্ঠায় “স্বলাত”, “সলাত” উভয় বানানে পেয়েছি। আবার কোথাও হয়ত আছে “সালাত”। ইসলামী পরিভাষাগুলোর বানান রীতি যেটাই অনুসরণ করা হোক না কেন পুরো বইতে একই রীতি অনুসরণ করলে ভাল হবে। অল্প কিছু জায়গায় বাক্যগুলোর শব্দ চয়ন দেখে মনে হতে পারে গুগল ট্রান্সলেটরের অনুবাদ। আরেকটু সাবলীল অনুবাদ হওয়া সম্ভব ছিল। প্রকাশনীর দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে এই ভুলগুলো ইতমধ্যেই ঠিকঠাক করা হয়েছে। পরের সংস্করণেই ইনশাআল্লাহ আরো পরিশুদ্ধ রূপে বইটি বাজারে আসবে।
 
সব মিলিয়ে বইটি অসাধারণ। আমার ব্যক্তি জীবনে এর সুপ্রভাব পড়ছে ও সকল পাঠকের জীবনেও পড়বে ইনশাআল্লাহ। বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।
 
সকল পাঠকের কাছে আন্তরিক অনুরোধ, আপনার দুআয় আমাকে রাখবেন। আল্লাহ যেন আমার ও আমার পরিবারের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সুখ ও প্রশান্তি দান করেন, যেন সকল পেরেশানী দূর করে দেন। আল্লাহ যেন আমাকে লোক দেখানো কাজ করা থেকে বিরত রাখেন। আল্লাহ যেন আমাকে ঋণগ্রস্থ না করে দেন। আল্লাহ যেন দুনিয়া ও আখিরাতে আমার দোষত্রুটি গোপন করেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইলম অর্জন ও সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *