পোস্টটি পড়া হয়েছে 94,464 বার

তেলাপোকা তত্ত্ব – গুগল সিইও সুন্দর পিচাইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর গল্প

Post updated on 6th May, 2018 at 11:53 am

Cockroach theory বা তেলাপোকা তত্ত্ব হচ্ছে আত্মউন্নয়নের (self development) একটা তত্ত্ব। দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর একটা গল্প!

একটা রেস্টুরেন্টে হুট করেই একটা তেলাপোকা ঢুকে পড়ল। ঢুকে উড়তে উড়তে গিয়ে বসল একজন ভদ্রমহিলার গায়ে। আর যায় কোথায়! তিনি হাতপা ছুঁড়েটুরে চিৎকার শুরু করলেন। মোটামুটি ভীতিকর একটা পরিস্থিতি তৈরি হল। তার এই আতংক সংক্রমিত হল তার সাথে আসা অন্যান্য বন্ধুদের মধ্যেও! তারা প্রায় সকলেই তেলাপোকার ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলেন।

এক পর্যায়ে তেলাপোকা দ্বারা আক্রান্ত সেই ভদ্রমহিলাটি কোন রকমে তেলাপোকাটাকে গা থেকে ছুঁড়ে ফেলে প্রাণে বাঁচলেন! আর তেলাপোকা? ‘পড়বি তো পড় মালির ঘাড়েইএই কথাকে স্বার্থক করতে উড়ে গিয়ে বসল তার গ্রুপেরই আরেকজন ভদ্রমহিলার গায়ে! হাসি যেমন সংক্রামক, ভয় বা আতংকও একই রকম সংক্রামক। আরেকজনের গায়ে পড়ার পর এই আতংক বেড়ে গেল আরো কয়েক গুণ! সবাই নতুন উদ্যমে হাতপা ছুঁড়ে লাফালাফি, চিৎকার করে এই সমূহ বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। রীতিমত তেলাপোকা ছুঁড়োছুড়ি চলতে লাগল। তেলাপোকা মহাশয় একবার এর গায়ে বসে তো আরেকবার ওর গায়ে বসে!

ছুঁড়োছুড়ির এই যখন অবস্থা তখন ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন রেস্টুরেন্টের একজন ওয়েটার। আসা মাত্র তেলাপোকা এবার আয়েশ করে বসল বেচারা ওয়েটারেরই গায়ে!!!

কিন্তু একি!!! ওয়েটার কি বুঝতে পারছে না তেলাপোকার ভয়াবহতা??? সে একদম নিরব। চুপ করে সে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। সে নিরবে দাঁড়িয়ে দেখল তেলাপোকার গতিবিধি। এরপর যখন সে নিশ্চিত হল তখন খপ করে তেলাপোকাটাকে ধরে ফেলল হাতের মুঠোয়! আর সেটিকে ফেলে দিল রেস্টুরেন্টের বাইরে!

কফিতে চুমুক দিতে দিতে যখন আমি এই কান্ডকারখানা দেখছিলাম তখন বেশ কয়েকটা বিষয় আমাকে নাড়া দিল। সেগুলো ভেবে আমি বেশ আশ্চর্যই হলাম!

আচ্ছা, শুধুমাত্র এই তেলাপোকাটাই কি তাদের এই অদ্ভুত আচরণের জন্য দায়ী?

যদি তাই হয়, তাহলে ওয়েটারটা কেন disturbed হল না?

সে তো কোন উচ্চবাচ্চ্য ছাড়া, একরকম নিখুঁত ভাবেই পুরো বিষয়টা হ্যান্ডেল করলো!

তার মানে এই যে এর জন্য তেলাপোকাটা দায়ী নয়। দায়ী মূলত ঐ লোকগুলোর তেলাপোকা দ্বারা সৃষ্ট disturbance-টাকে (সমস্যা/ঝামেলা/ঝঞ্ঝাট) হ্যান্ডেল করার অক্ষমতা, যা প্রথম ভদ্র মহিলাকে ঝামেলায় ফেলেছিল।

আমি চিন্তা করে দেখলাম যে আমার বাবা, আমার বস বা আমার স্ত্রীর চিৎকার আসলে আমার disturbed হবার কারণ না। বরং এটা আমারই দূর্বলতা যে আমি তাদের চিৎকার/বকাবকির জন্য সৃষ্ট disturbance-টাকে ঠিকঠাক মত সামাল দিতে পারছি না।

একইভাবে, রাস্তার ট্রাফিক জ্যাম কিন্তু আমাকে বিরক্ত (disturbed) করে না। আসলে ট্রাফিক জ্যামের জন্য সৃষ্ট বিরক্তিটা আমার অক্ষমতার কারণে handle করতে পারছি না। এটিই আসলে আমাকে বিরক্ত করছে!

সমস্যাগুলো যতটা না বড়, আমি react (প্রতিক্রিয়া) দেখাচ্ছি আরো বড় করে। যা আমার জীবনকে ঝঞ্ঝাটপূর্ণ করে তুলেছে। আমরা প্রতিটা সমস্যাকেই অনেক বড় করে দেখতে অভ্যস্ত।

গল্পটা থেকে যা শিখলামঃ

আমি বুঝতে পেরেছি যে জীবনের কোন ঘটনার প্রতিই আমার react (তীব্র প্রতিক্রিয়া অর্থে) করা উচিত নয়, আমার উচিত response (সাড়া দেয়া) করা।

প্রথম মহিলাটি তেলাপোকার ঘটনায় react করেছিল, আর ওয়েটার যা করেছিল তা হচ্ছে response (যা যথোপযুক্ত প্রতিক্রিয়া)।

রিয়েকশনগুলো হচ্ছে আমাদের স্বভাবজাত বা জন্মগত একটা বৈশিষ্ট্য, অপরপক্ষে রেসপন্সগুলো হয় আমাদের জ্ঞান ও সঠিক চিন্তার ফসল।

জীবনকে বোঝার একটা সুন্দরতম পন্থা হচ্ছেঃ

একজন মানুষ এই জন্য সুখী হয় না যে তার চারপাশের সব কিছুই শতভাগ সঠিক।

বরং সে সুখী হয় তার ‘চারপাশের সবকিছুই ঠিক’ এই মনোভাবের কারণে…!!!

 

পুনশ্চ ১ঃ বলা হচ্ছে যে এটি গুগলের CEO সুন্দর পিচাই এর একটি বক্তৃতা থেকে নেয়া হয়েছে। যদিও এই ধরনের গল্প বা চিন্তাটা অনেক আগে থেকেই শোনা যায়। Linkedin এর  এই পোস্টের পরে Quora-তেও এটা পিচাই এর নাম করে পোস্ট হয়। এরপরই বিষয়টা ভাইরাল হয়ে পড়ে। Youtube এ সার্চ করেও মিস্টার পিচাই এর এই লেকচারের ভিডিও পাই নি। কথাগুলো পিচাই সাহেবের হোক বা না হোক, এটা মানতেই হবে যে এটা জীবন সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা পাল্টে দিবে। সবার জীবন সুখের হোক।]

পুনশ্চ ২ঃ বর্ণনার সাবলীলতা রক্ষার জন্য অনেকগুলো ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছি। ধারণা করছি শব্দগুলোর বাংলা অনুবাদ করা হলে লেখার হয়ত মূলভাবটা ব্যাহত হবে। উপযুক্ত শব্দ পেলে ইংরেজি শব্দগুলোকে পরিবর্তন করে দেয়া হবে। আপনার পরামর্শ একান্ত কাম্য।

16 thoughts on “তেলাপোকা তত্ত্ব – গুগল সিইও সুন্দর পিচাইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর গল্প

  1. অনেক সুন্দর করে লিখেছেন ভাইয়া। পরবর্তি পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম।

  2. ভাইয়া ভাল লিখেছেন । শুভ কামনা রইল আপনার জন্য । চালিয়ে যান ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *