Post updated on 6th July, 2016 at 03:14 pm
ছোট বেলার সহপাঠিনী হুমায়রা বহুদিন পরে ফোন দিল। প্রায় বছর ২-৩ হতে পারে। শেষ কবে কথা বা চ্যাট হয়েছে মনে নাই। ওর কাছে কী কী উপলক্ষ্যে যেন অনেকগুলা ট্রিট পাওনা আছি। ট্রিটের প্রেক্ষাপট কালের স্রোতে বিস্মরণ হয়েছে। যতবারই ট্রিটের উপলক্ষ্য তৈরি হত সব এক জায়গায় নিয়ে ঠেকাতো, এই ভদ্র মহিলা। তেনার বিবাহের সময় একবারে খাওয়াবে… 😀
অনেক দিন বিবাহের খাওয়া-দাওয়া হয় না। এতদিন পর যেহেতু ফোন দিয়েছে তার মানে ঘটনা কিছু ঘটেছে… 😛 উচ্ছসিত কন্ঠে সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করলাম। সালামের উত্তর দিয়ে এক নাগারে বলে গেল “হাসান আমাদের বাসায় আগুন লাগছে, অনেকগুলা বাচ্চা সহ আমরা আটকা পড়ছি… তুমি ফায়ার সার্ভিসে খবর দাও…”। ওর কণ্ঠ আর আসেপাশের মানুষের চিৎকারে মাথাটা বার কয়েক চক্কর দিল। এমন সিচুয়েশনে কী করতে হয় জানি না। খালি জিজ্ঞেস করলাম রোড নাম্বার কত?
আল্লাহর রহমতে কারেন্ট আর নেট একই সাথে ছিল। গুগলে সার্চ করে পেলাম বাংলাদেশ ফায়ার ডিফেন্সের ওয়েবসাইট। রীতি অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইটগুলোর UX হতে হয় অত্যন্ত নিম্ন মানের। সেই ধারা অক্ষুন্ন আছে এই সাইটের ক্ষেত্রেও। সাইটের স্লাইডারে বিভিন্ন ছবি, ফায়ার সার্ভিসের মিশন ভিসন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি এক্সপেক্ট করেছিলাম শুরুতেই থাকবে বড় বড় হরফে জরুরি ফোন নাম্বার। অবশেষে ফুটারে গিয়ে পেলাম জরুরি প্রয়োজনে ফোন করার জন্য কয়েকটা নাম্বার।
একবার টোন বাজতেই ফোন রিসিভ করলেন ঐ প্রান্ত থেকে। যেটা আশাই করি নি। বললাম মিরপুর ১ থেকে হাসান বলছি। অমুক জায়গায় আগুণ লেগেছে। উনি জাস্ট “ওয়েট করেন” বলে লাইনটা ট্রান্সফার করে দিলেন সম্ভবত মিরপুর ১ জোনের কোন কর্মকর্তার কাছে। বাহ… বেশ গোছালো কাজ তো! যাকে দিলেন তিনি ফোন ধরে আমাকে প্যানিকড হতে দিলেন না। জাস্ট স্পেসিফিক সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত কয়েকটা প্রশ্ন করে খট্ করে ফোন নামিয়ে রাখলেন। বেশ চমৎকৃত হলাম। আমাকে “আচ্ছা ভাই আমরা দেখছি…” বলে ৩ সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে ৩ সেকেন্ড আগে যেন ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যায় সেই কাজটাই করলেন তিনি। অসংখ্য ধন্যবাদ ও দোয়া, নাম পরিচয় না জানা ফোনের ওপ্রান্তের মানুষটির জন্য।
আমার বাসা থেকে হুমায়রার বাসার দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের মত হতে পারে। সাইকেল নিয়ে টেনে পৌঁছলাম ওর বাসার সামনে। উৎসুক জনতার চোখে মুখে উৎসবের আমেজ! যার যেই মোবাইলের ক্যামেরা আছে সেগুলো দিয়ে চলছে ফটোশ্যুট। একজনকে দেখতে পেলাম মই দিয়ে দুই তলার বারান্দায় উঠে পাশের বাড়ির পাইপ দিয়ে পানি দিচ্ছেন। আসেপাশের মানুষের সহযোগিতায় আগুণ ততক্ষণে নিভে এসেছে। ফোনে কথা বলে জানতে পারলাম প্রচন্ড ধোয়ার কারণে তখনও ৩ তলায় আটকে পড়ে আছে ওরা। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট রওনা হবার পরে হুমায়রার সাথে ৩-৪ বার ফোনে কথা বলে তাঁরা আপডেট নিয়েছেন। ইফতারের আগে আগের সময় হওয়ায় রাস্তায় জ্যাম ছিল। আমি পৌঁছানোর ২-৩ মিনিটের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের ৩টা গাড়ি চলে আসে। মানুষের ভিড় ঠেলে কোন মতে গাড়িগুলো চাপা গলি দিয়ে সামনে এগোয়…
জীবনের প্রথম এমন কোন ঘটনার মুখোমুখি হলাম। ইফতারের পরে খবর নিয়ে জানলাম আল্লাহর রহমতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটে নাই। রান্না ঘর থেকে আগুণের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। বেশ কিছু শিক্ষা পেয়েছি ঘটনার আকস্মিকতায়। সেগুলো লিখে রাখার জন্যেই এই নোট। আগের নোটগুলো দেখলাম প্রায় ২০০০+ বার পড়া হয়েছে। এই নোটটাও যদি ২০০০ মানুষ পড়ে সচেতন হয় তাহলে কারো না কারো হয়ত কখনো এই শিক্ষাগুলো কাজে লাগলেও লাগতে পারে।
যদিও সব থেকে বড় শিক্ষা হচ্ছে “আমাদের শিক্ষার অভাব প্রকট”। বিভিন্ন গার্মেন্টস বা ফ্যাক্টরিতে মাঝে মাঝে ফায়ার সার্ভিসের মহড়া হয়। আবাসিক এলাকাগুলিতেও এই টাইপের মহড়ার ব্যবস্থা করা গেলে ভাল হয়। দুর্ঘটনার স্থানে ভীড় করে মোবাইলে ছবি তোলার চেয়েও যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকতে পারে সেগুলো সেখানো হবে সেই মহড়ায়। ক্রমাগত হুইসেল দিয়ে সরে যেতে বলার মানে যে আসলেই ‘সরে যাওয়া’ সেটা একটু বুঝানো দরকার চোখে আঙ্গুল দিয়ে। মানব প্রাচীর তৈরির চেয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে পথ করে দেয়া যে বেশি ভাল কাজ সেটাও আমাদের মাথায় গাট্টা মেরে না বললে আমরা বুঝব না।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, এম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংকের নাম্বার সংরক্ষণ করা
আমার সাথে নেট ছিল। তাই সার্চ করে নাম্বার বের করতে পেরেছি। আল্লাহ না করুন, আমার বাসায় আগুন লাগল। কিন্তু বাসায় নেট নাই, ফায়ার সার্ভিসের ফোন নাম্বার নাই তখন কিন্তু অনেক বড় বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে। তাই কাইন্ডলি নাম্বারগুলো ফোনে সংরক্ষণ করুন। ফায়ার সার্ভিসের নাম্বারগুলো নিচে দেয়া হলঃ
ফায়ার সার্ভিসের ফোন নাম্বারঃ 029555555, 029556666, 029556667
ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিলে কয়েকটা তথ্য দিতে হয়। যথাঃ ১। আগুন যেখানে লেগেছে তার স্পষ্ট ঠিকানা। রোড নাম্বার, বাড়ি নাম্বার, সেকশন ইত্যাদি। ২। কয় তলায় আগুন লেগেছে আর বাড়ি কয় তলা। ৩। ভিতরে আটকা পড়া কারো মোবাইল নাম্বার বা এমন কারো মোবাইল নাম্বার যার সাথে কথা বললে সর্বশেষ আপডেট তারা জানতে পারবে। ৪। বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তা কেমন অর্থাৎ বড় গাড়ি ঢুকবে কিনা।
বিল্ডিং এ আগুন লাগলে বের হয়ে আসার জন্য চেষ্টা করতে হবে। পুড়ে যাওয়া থেকে বাঁচার জন্য ভেজা কাঁথা-কম্বল জাতীয় কিছু মুড়ি দিয়ে দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। সেটা সম্ভব না হলে বাড়ির ছাদে উঠে যেতে হবে। যেন নিচ দিয়ে উদ্ধার করা না গেলেও উপর থেকে উদ্ধার করা যায়। ধোঁয়ার মধ্যে নিঃশ্বাস নেয়া কষ্টকর। টিকে থাকার জন্য ভেজা গামছা নাকে চেপে নিঃশ্বাস নিলে ধোঁয়া থেকে কিছুটা বাঁচা যাবে।
এক সময় ধারণা ছিল ফায়ার সার্ভিসের কাজ শুধু আগুন নেভানো। কিন্তু কিছুদিন আগেই জানতে পারলাম রোড এক্সিডেন্ট বা কোথাও কেউ আটকা পড়লে তাকে উদ্ধার এসব কিছুও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাজের মধ্যে পড়ে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেল্প লাইনঃ 100, 21777, 21666, 9551188 9514400, 01713398311
ঢাকার এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসগুলোর ফোন নম্বরঃ
আঞ্জুমান মফিজুল ইসলাম ৯৩৩৬৬১১, ৭৪১১৬৬০, ৭৪১০৭৮৬
আপনজন এম্বুলেন্স ৯১২৫৪২০
বারডেম ৯৬৬১৫৫১-৬০, ৮৬১৬৬৪১-৫০ এক্স-২৩০১
ঢাকা মেডিকেল ৮৬২৬৮১২
মেডিনোভা ৮১১৩৭২১, ৯১২০২৮৮, ৯১১৬৮৫১
জাতীয় হার্ট ইনষ্টিটিউট ৯১২২৫৬০-৭২
পিজি হাসপাতাল ৮৬১৪০০১-৫, ৮৬১৪৫৪৫-৯, এক্স ৪৬৯
রাফা এ্যাম্বুলেন্স ৯১১০৬৬৩
রেড ক্রিসেন্ট এ্যাম্বুলেন্স ৯১১৩৫১২, ৮৩১১৭২১-২৫
শহীদ সোহরাওয়ার্দি হাসপাতাল ৯১৩০৮০০, ৯১২২৫৬০-৬৯
শিশু হাসপাতাল ৮১১৬০৬১-২, ৮১১৪৫৭১-২
জরুরি সেবা সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য ও ফোন নাম্বার সম্বলিত একটা android এপ পেলাম প্লে স্টোরেঃ হটলাইন – Hotline BD
[Feel free, please share with your friends. Just for awareness.]